বসুদেব ও দেবকীর 8 টি সন্তান হল কীর্তিমান, ভদ্রসেন, সুষেন, উদারভি, ঋজু, সংবর্ধ, বলরাম, শ্রীকৃষ্ণ। তারমধ্যে কীর্তিমান, ভদ্রসেন, সুষেন, উদারভি, ঋজু, সংবর্ধ---এই ছয় জনকে কংস জন্ম হওয়া মাত্রই হত্যা করেছিল । বসুদেব ও দেবকীর 7ম সন্তান বলরামকে সাক্ষাৎ ভগবানের আদেশ এ যোগমায়া নন্দের গৃহে অবস্থানকারী বসুদেবের দ্বিতীয় স্ত্রী রোহিনীর গর্ভে স্থাপন করে দেন । পরবর্তীকালে বসুদেবের দ্বিতীয় পত্নী রোহিণীর গর্ভ থেকে বলরাম জন্মগ্রহণ করেন । পরবর্তীকালে বসুদেব ও দেবকীর 8ম সন্তান রূপে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং কংসের কারাগারে আবির্ভূত হন ।
নারায়ণশিলা পূজন এবং সেই পূজার অধিকারী ব্যক্তি কারা?? ❝স্ত্রীণামনুপনীতানাং শূদ্রাণাঞ্চ মহীশ্বর। স্পর্শনে নাধিকারোহস্তি বিষ্ণোর্ব্বা শঙ্করস্য চ।। শূদ্রো বানুপনীতো বা স্ত্রী বাপি পতিতোহপি বা। কেশবং বা শিবং বাপি স্পৃষ্ট্বা নরকমাপ্নুয়াৎ।।❞ —(বৃহন্নারদীয় পুরাণ)— বাংলা অনুবাদঃ— স্ত্রী, শূদ্র এবং অনুপবীতের শালগ্রামশিলা এবং ব্রাহ্মণ প্রতিষ্ঠিত শিবলিঙ্গ স্পর্শ করিবার অধিকার নেই, স্পর্শ করিলে পতিতপূর্ব্বক নরকগামী হইতে হবে। ❝স্ত্রীশূদ্রপতিতানাঞ্চ ষন্ডানাঞ্চ বিকর্ম্মণাম্। নৈবাধিকারে। বিজ্ঞেয়ঃ শালগ্রাম শিলার্চ্চনে।❞ বাংলা অনুবাদঃ— স্ত্রী, শূদ্র, পতিত, পাষন্ড এবং বিকর্ম্মীদের শালগ্রামশিলার্চ্চনে কোনপ্রকার অধিকার নেই। ❝স্ত্রীশূদ্রকরসংস্পর্শে বজ্রস্পর্শাধিকো মতঃ।। মোহাদ্ যঃ সংস্পৃশেচ্ছূদ্রো যোষিদবাপি কদাচন শয়তে নরকে ঘোরে যাবদাভূতসংপ্লবম্।।❞ —(বরাহপুরাণ)— বাংলা অনুবাদঃ— বরাহদেব নিজ মুখে বলছেন— স্ত্রীলোক এবং শূদ্র জাতির করস্পর্শ বজ্রের স্পর্শাপেক্ষার অধিক হয়। মোহের বশবর্তী হয়ে যদি কোন শূদ্র বা নারী শালগ্রামশিলা স্পর্শ করে থাকেন তাহলে প্রলয়কাল পর্যন্ত তাহাকে নরকযাপন করতে হবে। ❝ন জাতু বৈ স্ত্রিয়া কার্য্যং শালগ্রামস্য পূজনম্। ভর্ত্তৃহীনাথ সুভগা স্বর্গলোকহিতৈষণী।। মোহাৎ স্পৃষ্ট্বাত মহিলা জন্মশীলগুণান্বিতা। হিত্বা পুণ্যসমূহন্তু সত্বরং নরকং ব্রজেৎ।। স্ত্রীপাণিমুক্তপুষ্পাণি শালগ্রামশিলোপরি। সর্ব্বাভ্যধিকপাপানি বদন্তি ব্রাহ্মণোত্তমাঃ।। চন্দনং বিষপঙ্কাভং কুঙ্কুমং বজ্রসন্নিভম্। নৈবেদ্যং কালকূটাভং ভবেদ্ভগবতঃ কৃতম্।। তস্মাৎসর্ব্বাত্মনা ত্যাজ্যঃ স্ত্রিয়া স্পর্শঃ শিলোপরি। কুর্ব্বতী যাতি নরকং যাবদিন্দ্রাশ্চতুর্দ্দশ।।❞ —(পদ্মপুরাণ, পাতালখন্ড)— বাংলা অনুবাদঃ— পরলোকশুভাভিলাষিণী স্বামীসৌভাগ্য-শালিনী বা ভর্ত্তৃহীনা নারী কখনোই শালগ্রামশিলার পূজা করিবেন না। সৎকূলজাতা সর্ব্বসদ্ গুণাসম্পন্না নারী মোহবশতঃ শালগ্রাম স্পর্শ করিলে পূর্ব্বকৃত পূণ্যরাশি হারাইয়া সত্বর নরকগামিনী হইবেন। শালগ্রাম শিলার উপর নারীহস্ত মুক্ত পুষ্পই সর্ব্বপেক্ষা অধিকতর পাপজনক। স্ত্রী হস্তক্ষিপ্ত চন্দন বিষপঙ্কবৎ, কুমকুম বজ্র সদৃশ এবং নৈবেদ্য কালকূটবৎ কথিত হইয়া থাকে। তজ্জন্য স্ত্রীগণের শালগ্রাম স্পর্শ সর্ব্বদা অবিহিত। নিষেধবিধি অতিক্রম করিয়া কোন নারী শালগ্রাম স্পর্শাদি করিলে নিশ্চয়ই চতুর্দ্দশ- ইন্দ্রাধিকার ব্যাপককালে নরক বাস করিবে। ❝ব্রাহ্মণস্যৈব পূজ্যোহহং শুচেরপ্যশুচেরপি। স্ত্রীশূদ্রকরসংস্পর্শো বজ্রপাতোধিকো মম।।❞ —(লিঙ্গ পুরাণ)— বাংলা অনুবাদঃ— স্বয়ং ভগবান বলিতেছেন- কেবলমাত্র ব্রাহ্মণই শুচি কিনবা অশুচি অবস্থায় আমার পূজা করিতে পারে। স্ত্রী এবং শূদ্রের স্পর্শ আমার নিকট বজ্রপাতের চেয়েও অধিক পীড়াদায়ক। ❝বিপ্র-ক্ষত্রিয়-বৈশ্যানাং শালগ্রামশিলার্চ্চনে। অধিকারো ন শূদ্রানাং হরেরেবার্চ্চনে তথা।।❞ —(ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ, শ্রীকৃষ্ণ জন্মখন্ড)— বাংলা অনুবাদঃ— বিপ্র ক্ষত্রিয় বৈশ্যর শালগ্রামশিলার্চ্চনে অধিকার আছে কিন্তু শূদ্রের তাহাতে নেই। ❝বৃহৎ তন্ত্রসার❞ নামক কালজয়ী পুস্তকে উল্লেখ — ❝প্রণবোচ্চারণাৎ হোমাৎ শালগ্রামশিলার্চ্চনাৎ। ব্রাহ্মণীগমনাচ্চৈব শূদ্রশ্চান্ডালতাং ব্রজেৎ।।❞ বাংলা অনুবাদঃ— প্রণব উচ্চারণ, যজ্ঞ এবং শালগ্রামশিলা স্পর্শ এবং ব্রাহ্মণী বিবাহ করলে শূদ্র চন্ডালে পরিণত হয়। বৃহৎ তন্ত্রসারে সুস্পষ্টরূপে — ❝স্ত্রীশূদ্রকরসংস্পর্শো বজ্রপাতো মমোপরি ইতি ভগদ্বচনাৎ।❞ সুতরাং স্ত্রী-শূদ্রের হাতের ছোঁয়া স্বয়ং ভগবানের মস্তকে বাজ পরার সমান। ইহা কোন মনুষ্যকল্পিত বচন নয়; ইহা স্বয়ং বিরাট পুরুষ নারায়ণের উক্তি। অতএব কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ যখন এই ভগবদুক্তি বিষয়ে নিশ্চিত তখন অযথা সন্দেহ প্রকাশ করিবার কোন অবকাশ নেই। ❝যদি ভক্তির্ভবেত্তস্য স্ত্রীণাং বাপি বসুন্ধরে। দূরাদেবাস্পৃশন্ পুজাং কারয়েৎ সুসমাহিতঃ।। চরণামৃতপানেন সর্ব্বপাপক্ষয় ভবেৎ।❞ —(বরাহপুরাণ)— অস্যার্থ এই যে, যদি শূদ্র কিনবা নারী দূর হইতে স্পর্শ না করিয়া ভক্তি যোগে অনন্য মনে পূজা করে তবে সে বিষ্ণুর চরণামৃত পানে সকল পাপ হইতে মুক্ত হয়। পূর্ব্বোক্ত শ্লোকগুলি পর্যালোচনা করলে সহজেই প্রতীতি হয় স্ত্রী (উচ্চকোটি স্তরের হলেও) এবং শূদ্রের শালগ্রাম স্পর্শ তীব্রভাবে নিষিদ্ধ। স্বয়ং ভগবানের বচন দ্বারা তাহাই অনুমিত হয়। তাহারা স্পর্শ না করে পূজা করানোর অধিকারী। যথা পদ্মপুরাণে— ❝দীক্ষাযুক্তৈস্তথা শূদ্রৈর্মদ্যপানবিবর্জ্জিতৈঃ। কর্ত্তব্যং ব্রাহ্মণদ্বারা শালগ্রামশিলার্চ্চনম্।।❞ অতএব নিঃসংকোচে প্রতিষ্ঠিত হয় নারীদের এবং শূদ্রগণের শিলাচক্রের স্পর্শনীয়পূজাধিকার নেই।
প্রকৃত মহামন্ত্র হল - বৈদিক গায়ত্রীমন্ত্র, বৈদিক মহামৃত্যুঞ্জয় মহামন্ত্র এবং বৈদিক ॐ নমঃ শিবায় মহামন্ত্র। তাহলে কি হরিনাম করা যাবে না ? উত্তর — অবশ্যই করা যাবে, হরিনাম পরমপবিত্র। আমরা বলেছি "হরে কৃষ্ণ" এই বিশেষ ষোলো নাম নামক শ্লোকটি অশাস্ত্রীয়, কোনো শাস্ত্র এটির বিধান নেই , কিন্তু হরিনাম বলতে মানুষ শুধু "হরেকৃষ্ণ নামক ষোলো নাম" কে বুঝে বসে আছে, যা আসলেই লোকমুখে প্রচলিত মাত্র। হরিনাম বলতে আসলেই আরো অনেক কিছুই বোঝায়, যেমন আপনি - বাসুদেব, রাম, কেশব, মাধব, গোবিন্দ, রমাপতি, শ্রীহরি, নারায়ণ, বিষ্ণু, বৈকন্ঠপতি, কৃষ্ণ প্রভৃতি বলতে পারেন, এটিই নির্দেশ দিয়েছে শাস্ত্র। তাই "হরে কৃষ্ণ" নয় বরং শাস্ত্র অনুযায়ী হরির নাম গান করুন। মনে রাখবেন, দেবর্ষি নারদ চিরকাল "নারায়ণ নারায়ণ" গেয়ে চলেছেন, "হরে কৃষ্ণ" নয় । শুনুন হে সনাতনীগন কোনো কথা বিশ্বাস করার আগে সেটা পরখ করে বিচার করে নিন। না দেখে অন্ধবিশ্বাস করলে নিশ্চিত ভাবে ঠকবেন। সনাতন ধর্ম মানে শুধু হরে কৃষ্ণ নয়, সনাতন মানে - বেদ,উপনিষদ,পুরাণ,যোগ,ধ্যান,সাধনা, পরমেশ্বর শিব, মা দূর্গা, মা কালী, বিষ্ণু, পরশুরাম, রাম, কৃষ্ণ, ব্রহ্মা, মহামন্ত্র গায়ত্রীমন্ত্র, ॐ নমঃ শিবায় মহামন্ত্র। গনেশ,কার্তিক,ইন্দ্র,অগ্নি, বায়ু,চন্দ্র,সূর্য,বরুন,লক্ষী,সরস্বতী প্রভূতি। সনাতন ধর্ম কোনো কুয়ো নয়। সনাতন ধর্ম মহাসাগর.......... তাই অশাস্ত্রীয় হরে কৃষ্ণ একমাত্র মহানাম মহামন্ত্র বলে নিজেদের সনাতনী বলা বন্ধ করুন। এটা আপনি আপনার ভক্তির কারনে করছেন। কিন্তু চরম বাস্তব তো এটাই, আপনার সেই এত মূল্যবান ভক্তি কে কল্পিত বৈষ্ণবদের মতো একটা বিদেশী পশ্চিমা ব্যবসায়ী সংগঠন ব্যবহার করে তাদের প্রসার করছে। জানি এতসব সত্য কথা জানার পরেও আপনারা অবিশ্বাস করবেন। করুন অবিশ্বাস। কিন্তু তার আগে একবার অন্তত এই কথা গুলো নিজে বিচার করে দেখবেন। আপনি খুঁজে দেখে নিন আমরা অসত্য বলছি কি না। এভাবে নিজের অজান্তেই নিজের সনাতন ধর্ম কে শেষ করে দেবেন না অন্ধবিশ্বাস করে অনুরোধ রইলো আপনাদের কাছে। আমরা এইসব কল্পিত বৈষ্ণবদের মতো ধর্মের নামে ষড়যন্ত্র কারীদের নোংরামি বন্ধ করতে লড়ে যাবো। (বিশেষ দ্রষ্টব্য - আমি কৃষ্ণনিন্দুক নই, শ্রীকৃষ্ণ আমাদের গুরু, তিনি আমাদের প্রাচীন আদি সনাতনী মহাপাশুপত শৈবপরম্পরায় দীক্ষিত ছিলেন, তাই তার নিন্দা করে আমরা নিজেদের পরম্পরার সম্মান নষ্ট করতে পারি না। সুতরাং এই ভ্রমে থাকবেন না)
তাহলে হরে কৃষ্ণ একমাত্র মহামন্ত্র নয় এটা প্রমাণ হল কিন্তু তাহলে এটা কারা প্রচার করছে ? আর তাদের প্রচার করার উদ্দেশ্যে কি ?? উঃ - যারা প্রচার করছে তারা হল কল্পিত বৈষ্ণব, বিদেশী ব্যবসায়ী এরা। এরা বলতে চাইছে যে এরাই একমাত্র ঠিক আর এতদিন যা বেদ পুরাণ বলেছে সেগুলো সব ভুল। তাদের উদ্দেশ্য হল তাদের ভুলভাল মনগড়া গল্পের বই গুলো বিক্রি করে টাকা কামানো, আর ওই বইয়ের মধ্যে লেখা ভুলভাল তথ্য দ্বারা সাধারণ মানুষের মগজ ধোলাই করা। এর ফলে যারা নতুন ধর্ম শাস্ত্র বই পড়ার কথা ভেবে গীতা কিনতে আসে তখনই "বিদেশী ব্যবসায়ী কল্পিত বৈষ্ণব" রা তাদের লেখা বিকৃত ভুলভাল ব্যাখ্যা করা নকল গীতা তাদের কাছে বেচে দেয়। ব্যাস..... এই বইটা যারা পড়বে প্রথমেই তাদের মগজধোলাই হয়ে যাবে আপনাআপনি। এখানেই এদের ব্যবসার প্রথম প্ল্যান সফল, এবার সহজেই তারা তাদের মনগড়া গল্প বলবে আর অজ্ঞান পাবলিক তাই সনাতন ধর্ম বলে বিশ্বাস করবে। কারন সাধারণ মানুষ তো আর অতো খুজতে যায়না কোথায় কত সূক্ষ্ম ভাবে বিকৃত করেছে কল্পিত বৈষ্ণবরা। তাই তারা ওদের নকল গীতার মধ্যে থাকা সমস্ত ভুলভাল কথা গুলোকে মূল শাস্ত্র কথা ভেবে বিশ্বাস করে। সাধারণ মানুষ তো আর জানে না যে বিদেশি কল্পিত বৈষ্ণবরা তাদের ব্যবসা বাড়ানোর জন্য চৈতন্যদেবের নাম কে সামনে দেখাচ্ছে আর মানুষের মগজ ধোলাই করে চলেছে, যার কারণে বর্তমানে আমাদের সনাতন ধর্মের লোকেরা সনাতন ধর্ম বলতে শুধু কপালে তিলক কাটা গলায় তুলসীর মালা আর হরে কৃষ্ণ শ্লোককেই একমাত্র সনাতন ধর্মের রীতিনীতি ভেবে ভ্রমে পড়ে আছে। তারা বিদেশী ম্লেচ্ছ কল্পিত বৈষ্ণবদের দ্বারা এত পরিমানে মগজ ধোলাই খেয়েছে যে তারা হরে কৃষ্ণ কোথা থেকে এল ? কেন এল ? কারা এনেছে ? তার ইতিহাস এরা জানেই না। আর এরা নিজেরা খুঁজেও দেখে না যে এর আসল ইতিহাস টা কি ? আদৌও কি এসব সত্যি নাকি ভুয়ো ? সেসব নিয়ে কারোর মাথা ব্যাথা নেই। আগের দিনে যেমন মনগড়া দেবতা কল্পনা করে মানুষদের বোকা বানাতো ব্রাহ্মণ্যবাদীরা, ঠিক তেমনি এখন এই বিদেশী কল্পিত বৈষ্ণব রা একই পদ্ধতিতে নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধ করতে সাধারণ মানুষকে বোকা বানাচ্ছে। আর এর বিরুদ্ধে সত্য টা তুলে ধরলেই বোকা পাবলিকরাই গালিগালাজ করবে, আসলে এটা স্বাভাবিক। কারন যেটা মানুষ বিশ্বাস করে ফেলে মনে প্রাণে সেটা পরে ভেঙে গেলে যেমন কষ্ট পায় ঠিক তেমনি এই চরম কঠিন সত্য কে সাধারণ মানুষ মেনে নিতে কষ্ট বোধ করে। অবশ্য এমন কিছু মানুষও আছে যারা এইসব ভণ্ডদের সন্দেহ করেছিল কিন্তু তারা কোনো প্রমাণ খুঁজে পাচ্ছিল না, তারা অবশ্যই এই আলোচনার মমার্থ বুঝবে।
তাহলে এখন অনেক বৈষ্ণব রা বলতেই যে, "হরে কৃষ্ণ" শ্লোক থাকা কলিরসন্তরণ উপনিষদ নকল কি না তার কেমন করে বুঝলেন? উত্তর:— বেদশাস্ত্রে কোনো মন্ত্রের উপদেশ থাকলে সেই মন্ত্রের ঋষি কে, ছন্দ কি, দেবতা কে, শক্তি বীজ কি এগুলির উল্লেখ থাকে সর্বদা। কলিরসন্তরণ উপনিষদ নামের যে গ্রন্থে "হরে কৃষ্ণ" নামক শ্লোক রয়েছে , সেখানে এই "হরে রাম হরে কৃষ্ণ" শ্লোকের দেবতা কে ? ঋষি কে ? ছন্দ কি ? তা ঐ গ্রন্থএ উল্লেখ নেই। এর থেকে পরিষ্কার করেই নিশ্চিত হওয়া যায় যে ঐ কলিরসন্তরণ উপনিষদ নামের যে পুস্তকে "হরে কৃষ্ণ" - উল্লেখ আছে তা সম্পূর্ণ কাল্পনিক। কোনো বৈষ্ণব পুরাণে এই "হরে কৃষ্ণ হরে রাম" কে শব্দপ্রমাণ সহ সমর্থন কথা হয়নি ।এমনকি বৈষ্ণবপুরাণগুলির কোথাও উল্লেখ পর্যন্ত নেই "হরে কৃষ্ণ" -শ্লোকের, কলির মহামন্ত্র হওয়া তো দূরের কথা। অথচ শিবমহাপুরাণ থেকে শুরু করে সমস্ত শাস্ত্রে যজুর্বেদের ১৬নং অধ্যায়ের ৪১নং মন্ত্র "নমঃ শিবায়" কে কলিযুগের মহামন্ত্র বলা হয়েছে। মহা পাশুপত পরম্পরার গুরুপরম্পরাগত মান্যতা অনুসারেও নমঃ শিবায় মহামন্ত্রকে কলিযুগের একমাত্র মুক্তির পথ বলে মান্য করা হয়। নমঃ শিবায় মহামন্ত্রের ঋষি ছন্দ দেবতা উল্লেখ রয়েছে শাস্ত্রে তথা প্রকৃত কলিরসন্তরণ উপনিষদে। এরই সাথে কৈবল্য উপনিষদেও বলা হয়েছে শতরুদ্রিয় পাঠ করলে পরমগতি লাভ হয়। আর এই শতরুদ্রিয় সূক্তের মধ্যেই নমঃ শিবায় মহামন্ত্র রয়েছে। কিন্তু কলিযুগের প্রভাবে এই সত্য বিলুপ্তির পথে এগিয়ে যাচ্ছে তাই আমরা এই কলিরসন্তরণ উপনিষদ কে তুলে ধরা জন্য উদ্যোগ নেবো।
কলিরসন্তরন উপনিষদ কেন বেদের অংশ নয় ? উঃ - বৈদিক প্রধান উপনিষদ ১০৮টি এই প্রধান উপনিষদ গুলির মধ্যে ১টি হল কলিরসন্তরণ উপনিষদ। সেই প্রধান কলিরসন্তরণ উপনিষদে নমঃ শিবায় মন্ত্র কে কলিযুগের মহামন্ত্র বলা হয়েছে। তাই এই কলিরসন্তরণ আসল । কিন্তু, কলিরসন্তরণ উপনিষদ নামের যে পুস্তকে "হরে কৃষ্ণ" - উল্লেখ আছে তার মধ্যযুগে রচিত হয়েছে, এটি আসল কলিরসন্তরণ উপনিষদ নয়, এটি নকল কলিরসন্তরণ উপনিষদ। তাই এটি অমান্য।
তাহলে এই হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র যদি অশাস্ত্রীয় হয় তবে এর উৎপত্তি কি করে হল??? উত্তর — যারা আসলেই ব্রাহ্মণ নয়, যাদের মধ্যে প্রকৃত ব্রাহ্মণ হবার বৈশিষ্ট্য ছিল না, সেই সব অত্যাচারী ব্যক্তি ব্রাহ্মণ হবার ভেক ধরে মধ্যযুগে সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে জাতিভেদ প্রথা দ্বারা সাধারণ মানুষকে ঈশ্বরের উপাসনা থেকে বঞ্চিত করতো, লাঞ্ছিত হতে হতো নির্দোষ নিরহ সাধারণ সনাতন হিন্দুদের। তাছাড়া তখন "মু স লিম" দের প্রভাব ছিল। তাই ব্রাহ্মণ দের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে তারা "মু স লিম"দের প্রোরচনায় পড়ে ই স লাম মতবাদ গ্রহণ করে নিতে শুরু করেছিল।এটি রুখতে চৈতন্যদেব এগিয়ে এসেছিলেন, যিনি সমস্ত জাতিভেদ কে দূরে সরিয়ে সমস্ত সাধারণ সনাতনীদের কে সনাতন ধর্মতে টিকিয়ে রাখতে চেষ্টা করেছিলেন। মানুষ কে ভগবানের পথে চালিত করবার জন্য তৎকালীন সময়ে তিনি এমন একটি কৌশল অবলম্বন করেন যা তৎকালীন সময়ে মানুষের ধার্মান্তকরণকে রোধ করতে পারে। যাতে সনাতনধর্মীরা ধর্ম ত্যাগ না করেন এবং সংঘবদ্ধ হন। তিনি যেভাবে মানুষ কে মাতোয়ারা করতেন তার মূল কারন হল নাম সংকীর্তন। এই নামসংকীর্তনের শব্দ গুলি হল - “হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে” এই নামসংকীর্তনের "হরেকৃষ্ণ" শ্লোক টি চৈতন্যদেব কোথা থেকে পেয়েছিলেন ? উত্তর — প্রাচীন কাল হতেই ১০৮টি উপনিষদ কে মান্য করা হয়ে আসছে, সেই ১০৮টি উপনিষদের মধ্যে একটি উপনিষদের নাম ছিল কলিরসন্তরণ উপনিষদ। যার অর্থ "কলিযুগেও সাঁতার কাটা" । প্রকৃতপক্ষে "আসল কলিরসন্তরণ উপনিষদ" - এ যজুর্বেদের রুদ্রসূক্ত "শতরুদ্রিয়" ও তার মধ্যে থাকা "নমঃ শিবায়" মহামন্ত্রকে কলিযুগের একমাত্র মুক্তির পথ বলে ঘোষণা করা আছে। কিন্তু , চৈতন্যদেব এই কলিরসন্তরণ উপনিষদের নামে আরো একটি কলিরসন্তরন উপনিষদ রচনা করান। যা সম্প্রদায়গত অবৈদিক গ্রন্থ, নাম মাত্র উপনিষদ এটি। এককথায় বলা যায় "নকল কলিরসন্তরন উপনিষদ" এটি। এই নকল কলিরসন্তরণ উপনিষদেই লেখা হয়েছে "হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে" চৈতন্যদেব এই "নকল কলিরসন্তরন উপনিষদ"-এর শ্লোকটিকে নিয়ে উল্টে দেন, প্রথমদিকে "হরে কৃষ্ণ" কে নিয়ে আসেন ও শেষে "হরে রাম" করে দেন। তখনকার দিনে ব্রাহ্মণ্যবাদের অত্যাচারে সাধারন মানুষ বেদ পড়তে পারতেন না, সাধারন মানুষের অধিকার দেয়া হত না, বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণ করার বা শোনারও অধিকার ছিল না। তাই চৈতন্যদেব মধ্যযুগে রচিত নতুন কিছু শ্লোকের দ্বারা তৈরি নকল কলিরসন্তরন উপনিষদ কে ব্যবহার করেন। এই উপনিষদ বেদের কোনো অংশ নয়। তথাকথিত ব্রাহ্মণবেশধারী অত্যাচারী ব্যক্তিরা দেখলেন যে সাধারণ মানুষ কাল্পনিক "হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ" নাম করছে তাই এটাকে তারা তেমন গুরুত্বই দিলেন না। এর ফল স্বরূপ মানুষ ভগবানের নাম শোনার জন্য এই দলে সামিল হতে থাকে।কারন সেই সময়ে সঠিক বেদজ্ঞানের সাথে ভগবানের ভক্তি করার উপায় ছিল না ব্রাহ্মণ্যবাদীদের জন্য। তাই তারা চৈতন্যদেবের প্রচার করা হরে কৃষ্ণ মন্ত্র কেই ঈশ্বরের নাম ভেবে ভক্তির সহিত তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে থাকেন ও পরবর্তী কালে চৈতন্যদেবের প্রতি ভক্তিতে তাকে শ্রীকৃষ্ণের অবতার বলে প্রচার করতে থাকে। এই ভাবেই তিনি মহাপ্রভুতে পরিনত হয়ে কৃষ্ণ অবতার বলে পরিচিত হতে থাকেন সমাজে। এইভাবেই হরে কৃষ্ণ মন্ত্র হয়ে ওঠে লোকবিশ্বাস মতে, মহানাম। চৈতন্য দেব যদি এটা নিপীড়িত মানুষের জন্য এমন হরে কৃষ্ণ নামক ষোলো নাম বত্রিশ অক্ষর প্রচার করে থাকে তাহলে আপনারা আপত্তি কেন করছেন??? উত্তর: — এটা তৎকালীন সময়ে মানুষের জন্য করা হয়েছিল, ঠিক কথা। কিন্তু বর্তমানে এই অশাস্ত্রীয় "হরে কৃষ্ণ" কে বিশ্বাস করতে গিয়ে আসল শাস্ত্রের মহামন্ত্র কে অপমান করে চলেছে এই সব ভেকধারী বৈষ্ণবেরা। তারা দিনরাত শিব দুর্গার নিন্দা করছে, সব জায়গায় সব অনুষ্ঠানে "হরে কৃষ্ণ" গাওয়ার জন্য বাধ্যতামূলক নিয়ম তৈরি করছে, তার ফলে শাস্ত্রের নিদেশ লঙ্ঘন হচ্ছে। কেউ যদি ব্যক্তিগতভাবে হরে কৃষ্ণ শ্লোক কে বিশ্বাস করেন তবে সেখানে আমাদের কিছু বলার নেই। কিন্তু মনে রাখতে হবে, যারা শাস্ত্রকে না মেনে নিজের ইচ্ছেমতো অশাস্ত্রীয় পথে চলতে থাকেন তাদের কোন গতি হয় না , এটাই ভগবদ্গীতার ১৬তম অধ্যায়ের ২৩নং শ্লোকে বলা হয়েছে। তাই শাস্ত্র অনুযায়ী চলতে হবে সনাতনীদের। নিজের আবেগ অনুযায়ী নয়, অশাস্ত্রীয় পথে নয়। কারণ, হরে কৃষ্ণ নামক শ্লোক যে কলিরসন্তরণ উপনিষদ নামক গ্রন্থে আছে তা বেদের অন্তর্ভুক্ত নয়, এটি নকল কলিরসন্তরণ উপনিষদ।
হরে কৃষ্ণ কি কোনো মহামন্ত্র?
উত্তর — একদমই না..........
তবে এই হরে কৃষ্ণ মন্ত্র যে গৌড়ীয় বৈষ্ণব রা খুব ধুমধাম করে কলিযুগের মহামন্ত্র বলে প্রচার করছে, সেটা কেন ??
উত্তর — এটা আসলে মানুষ কে শর্টকার্টে গোলকধামে পৌঁছে দেওয়ার নামে একটা ব্যবসায়িক কুমতলব। যারা প্রচার করছে তারা তাদের অসাধু ব্যবসা চালাতে এই সব সব মনগড়া গল্প লোকের ঘরে ঘরে প্রচার করে করে মগজ ধোলাই করে মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত করেছে।
মানুষ কে বলা হচ্ছে যে আপনি সব ত্যাগ করে শুধু এই হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করুন তাহলে গোলক ধামে প্রমোশন পাবেন শর্টকার্টে। মানুষ এমনিতেই ভীষণ পরিমাণে অলস তথা কুড়ে তারপরে আরো শর্টকাটে ভগবান কে লাভ করা যাবে এটা ভেবেই অশাস্ত্রীয়(অবৈদিক) হরে
কৃষ্ণ মন্ত্র সারাদিন জপ করে চলেছে গলায় একটা ঝুলি ঝুলিয়ে ।
শাস্ত্রে বলা হয়েছে জপ করবার স্থান যেন শান্ত পরিবেশের হয়, সেই স্থানে শান্ত হয়ে বসে চুপ করে মনে মনে মন্ত্র উচ্চারণ করে হাতে কর গুনে বা মালাতে জপ করতে হবে , কিন্তু এই অপপ্রচারকারীরা বিগত চারশো বছর ধরে রাস্তাঘাটে লাফিয়ে লাফিয়ে নাচনকোদন করতে, লোকের সাথে কথা বলতে বলতে, ৩২টা দাঁত বের করে হাসাহাসি করতে করতে লোকদেখানো "হরেকৃষ্ণ" জপ করছে। আজকাল তো এরা এত অলস হয়ে গেছে যে, টিভি সিরিয়াল দেখতে দেখতে "হরেকৃষ্ণ" জপ করে।
সুতরাং এসব অশাস্ত্রীয় কারবার , নামধারী ভক্তরাই এই অশাস্ত্রীয় "হরে কৃষ্ণ" জপছে।
শ্রীকৃষ্ণের বাঁশি কে? ভগবানের হাতে যে বাঁশি ছিল সেটা কোন সামান্য বাঁশি নয়, এটা স্বয়ং মা সরস্বতী। মা সরস্বতী কৃষ্ণের অধরামৃত পান করবো বলে 10 হাজার বছর ধরে মা সরস্বতী কৃষ্ণ কৃষ্ণ বলে কেঁদে ছিলেন এবং কঠোর তপস্যা করেছিলেন। মা সরস্বতীর তপস্থায় খুশি হয়ে কৃষ্ণ খুশি হয়ে দেখা দিয়ে বললেন---------, সরস্বতী! বল তুমি কি চাও ? আমি তোমাকে তাই দিব। সরস্বতী হাতজোড় করে বলছিল! হে কৃষ্ণচন্দ্র তোমার অধরে কত সুধা রয়েছে, সেটা আমার জানা হলো না। কিন্তু আমি বিদ্যার ভাণ্ডার, বুদ্ধির ভান্ডার, তুমি যে কৃষ্ণ প্রেমো ধন। তোমার প্রেমের ভান্ডারে কত সুধামৃত আছে সেটা আমি পেলাম না। তাই আমি শুধু তোমার অধর সুধা পান করতে চাই। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সরস্বতীকে বলেছিলেন---- আমার অধরামৃতের অধিকার একমাত্র রাধারানীর। তাও আমি তোমাকে কথা দিলাম, 10 হাজার বছর ধরে যখন কেঁদে কেঁদে কঠোর তপস্যা করে আমাকে ডাকলে—-আমি তোমাকে অধরামৃত পান করাবো। যখন বৃহস্পতির যজ্ঞ থেকে তুমি বাঁশ রূপ ধারণ করে অংশ অবতার রূপে তুমি অবতীর্ণ হবে। আর সেই বাঁশ 25 পর্ব হবে। সেই 25 পর্ব থেকে 9 পর্ব দিয়ে বিষ্ণুর ধনুক হবে। 7 পর্ব দিয়ে শিবের ধনুক। 5 পর্ব দিয়ে রামের ধনুক। 3 পর্ব দিয়ে অর্জুনের ধনুক। আর 1পর্ব বাকি থাকবে তাকে আমি তিনটি টুকরো করব এবং তিনটি বাঁশি (1.বেনু, 2.বংশী, 3.মুরলী) বানাবো আর সরস্বতী তুমি বাঁশি রূপ ধারণ করে আমার হাতে থাকবে। আমি তোমাকে হাতে ধরে আমার ঠোঁটে ঠেকিয়ে তোমাকে অধরামৃত পান করাবো।।লোকে জানবে বাঁশি কিন্তু আমি জানব তুমি স্বয়ং সরস্বতী। বাঁশি কত প্রকার ও কি কি ?-------- বাঁশি 3 প্রকার— 1.বেনু, 2.বংশী, 3.মুরলী।
ব্রহ্মা বললেন—“যখন অনন্ত শক্তিশালী ভগবান গর্ভ সমুদ্রে নিমজ্জিত পৃথিবীকে উদ্ধার করার জন্য লীলাচ্ছলে বরাহ রূপ ধারণ করেছিলেন, তখন আদি দৈত্য (হিরণ্যাক্ষ) সেখানে এসে উপস্থিত হয়েছিল এবং ভগবান তাকে তাঁর দত্ত দ্বারা বিদীর্ণ করেছিলেন।
সর্বপ্রথমে প্রজাপতি রুচির পত্নী আকুতির গর্ভে সুযজ্ঞ নামে পুত্র উৎপন্ন হয়েছিল। তারপর সুযজ্ঞ তাঁর পত্নী দক্ষিণার গর্ভে সুযম প্রমুখ দেবতাদের উৎপাদন করেছিলেন।
সুষম ইন্দ্রদেবরূপে ত্রিলোকের (ঊর্ধ্ব, অধো এবং মধ্যবর্তী) মহান দুঃখভার হরণ করেছিলেন। ব্রহ্মাণ্ডের দুঃখভার হরণ করেছিলেন বলে মানব জাতির পিতা স্বায়ম্ভূব মনু তাঁকে হরি নামে অভিহিত করেছিলেন।
ভগবান তারপর কপিলদের রূপে প্রজাপতি কর্দম এবং তাঁর পত্নী দেবহূতির পুত্ররূপে নয়জন রমণীসহ (ভগ্নী) অবতরণ করেছিলেন। তিনি তাঁর মাতাকে আত্মজ্ঞান দান করেছিলেন, যার ফলে তিনি এই জন্মেই প্রকৃতির গুণরূপ পক্ষ থেকে সম্পূর্ণরূপে বিধৌত হয়ে কপিলদেবের প্রদর্শিত পন্থায় মুক্তি লাভ করেছিলেন।
অত্রি ঋষি সন্তান কামনা করে ভগবানের আরাধনা করেছিলেন, এবং ভগবান তার প্রতি প্রসন্ন হয়ে তাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, 'আমি আমাকে তোমার পুত্ররূপে দান করলাম।' তার ফলে ভগবানের নাম দত্তাত্রেয় হয়েছিল।
তার শ্রীপাদপদ্মের পরাগ দ্বারা পবিত্র হয়ে যদু, হৈহয় আদি নৃপতিগণ ঐহিক ও পারলৌকিক ঐশ্বর্য লাভ করেছিলেন। বিভিন্ন লোক সৃষ্টি করার বাসনা করে আমি তপস্যা করেছিলাম, এবং আমার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে ভগবান তখন চতুঃসন রূপে (সনক, সনৎকুমার, সনন্দন এবং সনাতন) আবির্ভূত হয়েছিলেন।
পূর্বকল্পে প্রলয়ে আত্মতত্ত্ব বিনষ্ট হয়েছিল, কিন্তু চতুঃসনেরা তা এত সুন্দরভাবে বর্ণনা করেছিলেন যে মুনিগণ তা তৎক্ষণাৎ স্পষ্টভাবে দর্শন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তপশ্চর্যা এবং কৃচ্ছ্রসাধনের নিজস্ব পন্থা প্রদর্শনের জন্য তিনি ধর্মের পত্নী এবং দক্ষের কন্যা মূর্তির গর্ভে নর এবং নারায়ণ এই দ্বিবিধ স্বরূপে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
কামদেবের সঙ্গিনী অপ্সরাগণ তাঁর তপস্যা ভঙ্গ করতে এসে যখন দেখল যে তাদের মতো বহু সুন্দরীগণ তাঁর দেহ থেকে নির্গত হচ্ছে, তখন তারা বিফল মনোরথ হয়েছিল। শিবের মতো মহাবলবান ব্যক্তিরা তাঁদের রোষযুক্ত দৃষ্টির দ্বারা কামকে দগ্ধ করতে পারেন, কিন্তু তাঁদের নিজেদের ক্রোধের প্রভাব থেকে মুক্ত হতে পারেন না।
কিন্তু ক্রোধের অতীত ভগবানের অমল অন্তঃকরণে কখনো প্রবেশ করতে পারে না, অতএব তাঁর মনে কিভাবে কাম আশ্রয় গ্রহণ করবে?”
“রাজার সমক্ষে ধ্রুব বিমাতার বাক্যবাণে জর্জরিত হয়ে অপমানিত বোধ করেছিলেন, এবং বালক হওয়া সত্ত্বেও কঠোর তপস্যা করার জন্য বনে গমন করেছিলেন। ভগবান তখন ধ্রুবের প্রতি প্রসন্ন হয়ে তাঁকে ধ্রুবলোক প্রদান করেন, উপরিস্থিত এবং অবাঞ্ছিত মহর্ষিগণ যাঁর স্তব করে থাকেন।
মহারাজ বেন উৎপথগামী হয়েছিল এবং তখন ব্রাহ্মণদের বজ্র-কঠোর শাপবাক্যে তার পৌরুষ ও ঐশ্বর্য দগ্ধ হয়। সে নরকে পতিত হতে থাকলে ব্রাহ্মণদের প্রার্থনায় এবং তাকে পরিত্রাণ করার জন্য ভগবান পৃথু অবতারে তার পুত্রত্ব স্বীকার করেন এবং সর্বপ্রকার শস্য পৃথিবী থেকে দোহন করেন।
মহারাজ নাভি এবং তাঁর পত্নী সুদেবীর পুত্ররূপে ভগবান আবির্ভূত হয়ে ঋষভদের নামে পরিচিত লাভ করেন। ই তিনি মনের সাম্যভাব লাভের জন্য জড়-যোগ অনুশীলন ন করেছিলেন। এই অবস্থাকে পারমহংসপদ বা মুক্তির চরম ।
সিদ্ধ অবস্থা বলে মনে করা হয়, যে স্তরে জীব তার স্বরূপে অবস্থিত হয়ে পূর্ণরূপে প্রশান্ত চিত্ত হয়। ভগবান আমার (ব্রহ্মার) অনুষ্ঠিত যজ্ঞে হয়গ্রীব অবতার রূপে প্রকট হয়েছিলেন। তিনি সাক্ষাৎ যজ্ঞ এবং তাঁর অঙ্গকান্তি সুবর্ণস্বরূপ।
তিনি সাক্ষাৎ বেদ এবং সমস্ত দেবতাদের : পরমাত্মা। যখন তিনি শ্বাস গ্রহণ করেছিলেন, তখন তাঁর নাসারন্ধ্র থেকে সমস্ত মধুর বৈদিক স্তোত্র ধ্বনিত হয়েছিল।”
“কল্পান্তে সত্যব্রত নামক ভাবী বৈবস্বত মনু দেখতে পাবেন যে মৎস্যাবতাররূপে ভগবান পৃথিবী পর্যন্ত সর্বপ্রকার জীবাত্মাদের আশ্রয়। কেননা কল্পান্তে প্রলয় বারির ভয়ে ভীত হয়ে বেদ-সমূহ আমার (ব্রহ্মার) মুখ থেকে নির্গত হয়, এবং ভগবান তখন সেই বিশাল জলরাশি দর্শন করে উৎফুল্ল হন এবং বেদ-সমূহকে রক্ষা করেন।
আদিদের ভগবান কূর্মরূপ ধারণ করে। অমৃতলাভের জন্য ক্ষীর-সমুদ্র মন্থনকারী দেবতা ও দানবদের মন্থনদণ্ডস্বরূপ মন্দর পর্বত পৃষ্ঠে ধারণ করেছিলেন। সেই পর্বতের ঘূর্ণনের ফলে অর্ধনিদ্রিত অবস্থায় ভগবান কয়ন সুখ অনুভব করেছিলেন।
পরমেশ্বর ভগবান দেবতাদের মহাভয় দূর করার জন্য ভয়ঙ্কর ভ্রূকুটি, দন্ত ও ভীষণ বদনযুক্ত নৃসিংহরূপ ধারণপূর্বক গদা হস্তে আক্রমণকারী দৈত্যরাজকে (হিরণ্যকশিপুকে) তাঁর উরুদেশে স্থাপন করে নখ দ্বারা তার বক্ষঃস্থল বিদীর্ণ করেছিলেন।
অধিক বলশালী কুমীর যখন জলের মধ্যে যূথপতি গজরাজের পদ ধারণ করে, তখন সেই গজরাজ অত্যন্ত কাতর হয়ে তার শুণ্ডের দ্বারা একটি পদ্ম ধারণ করে ভগবানকে সম্বোধন করে বলেছিল, 'হে আদি পুরুষ, আপনি সমস্ত ব্রহ্মাণ্ডের পতি।
হে পরিত্রাণকারী, আপনি তীর্থক্ষেত্রের মতো বিখ্যাত। আপনার দিব্য নাম স্মরণ করা মাত্রই সকলে পবিত্র হয়, তাই আপনার নাম কীর্তনীয়।' চক্রপাণি শ্রীহরি সেই শরণার্থী গজরাজের আর্তনাদ শ্রবণ করে পক্ষী রাজা গরুড়ের পৃষ্ঠে আরোহণপূর্বক তাঁর চক্রের দ্বারা কুমীরের বদন দ্বিখণ্ডিত করেছিলেন এবং কৃপাপূর্বক গজরাজের শুঁড় ধরে তাকে কুমীরের মুখ থেকে উদ্ধার করেছিলেন।"
“গুণাতীত ভগবান অদিতি-পুত্র আদিত্যদের মধ্যে বয়সে সর্বকনিষ্ঠ হলেও গুণে সর্বপেক্ষা শ্রেষ্ঠা ছিলেন। সেই যজ্ঞাধিষ্ঠাতা ভগবান বিষ্ণু পানিক্ষেপের বারা ব্রহ্মাণ্ডের সমস্ত লোক অতিক্রম করেন। ত্রিপাদ ভূমি ভিক্ষা করার ছলে তিনি বামনরূপে বলি মহারাজের অধিকৃত সমগ্র ভূবন অধিগ্রহণ করেছিলেন।
তিনি ভিক্ষার ছলে তা গ্রহণ করেছিলেন, কেননা নিগ্রহ এবং অনুগ্রহ করতে সমর্থ জনেরা সব কিছু করতে পারলেও ব্যতিরেকে সৎপথচারী ব্যক্তিকে ঐশ্বর্য করা তাদেরও কর্তব্য নয়। বলি মহারাজ, যিনি তাঁর মস্তকে ভগবানের পদধৌত জল ধারণ করেছিলেন, তাঁর গুরুর নিষেধ সত্ত্বেও তিনি তাঁর প্রতিশ্রুতি ব্যতীত অন্য আর কিছু চিন্তা করেননি। ভগবানের তৃতীয় চরণ রাখবার জন্য তিনি তাঁর দেহ নিবেদন করেছিলেন।
এই প্রকার ব্যক্তির কাছে হারিাজাও মূল্যহীন, যা তিনি স্বীয় বলের দ্বারা অধিকার করেছিলেন “হে নারদ! সেই ভগবান হংসাবতারে তোমার ঐকান্তিক ভক্তিতে পরিতুষ্ট হয়ে তোমাকে পরিপূর্ণভাবে ভক্তিযোগ এবং ভগবত্তত্ত্ববিজ্ঞান বিশ্লেষণ করেছিলেন। বাসুদেবের ঐকান্তিক ভক্তরাই কেবল সেই অন হৃদয়ঙ্গম করতে পারেন।
মন্বন্তর অবতারে ভগবান মনুর বংশধররূপে তাঁর সুদর্শন চক্রের দ্বারা দুষ্কৃতকারী রাজাদের দমন করেন। সর্বাবস্থায় অপ্রতিহতভাবে তাঁর রাজ্য শাসনের মহিমা এবং তাঁর কীর্তি ত্রিভুবনেরও ঊর্ধ্বে, ব্রহ্মাণ্ডের সর্বোচ্চলোক সত্যলোকেও বিস্তার লাভ করেছিল।
ভগবান ধন্বন্তরিরূপে অবতীর্ণ হয়ে নিরন্তর রুগ্ন জীবদের তাঁর স্বীয় কীর্তির দ্বারা অচিরেই রোগ নিরাময় করেন এবং তার প্রভাবেই দেবতারা দীর্ঘ জীবন লাভ করেন। এইভাবে পরমেশ্বর ভগবান নিরন্তর মহিমান্বিত হন। পূর্বে দৈত্যদের দ্বারা যে যজ্ঞভাগ অবরুদ্ধ হয়েছিল, তাও তিনি উদ্ধার করেন।
তিনি এই ব্রহ্মাণ্ডে আয়ুর বিষয়ক বেদ বা চিকিৎসা শাস্ত্র প্রবর্তন করেন। যখন ক্ষত্রিয় নামধারী শাসকেরা পরম সত্যের পথ থেকে ভ্রষ্ট হয়ে নরক যন্ত্রণা ভোগের অভিলাষী হয়েছিল, তখন পরশুরামরূপে অবতীর্ণ হয়ে ভগবান পৃথিবীর কণ্টকস্বরূপ সেই সমস্ত রাজাদের উচ্ছেদ করেছিলেন। এইভাবে তিনি তাঁর তীক্ষ্ণধার কুঠারের দ্বারা একুশবার ক্ষত্রিয়দের বিনাশ সাধন করেছিলেন।”
"এই ব্রহ্মাণ্ডের সমস্ত জীবের প্রতি অহৈতুকী কৃপার প্রভাবে ভগবান তাঁর অংশসহ মহারাজ ইক্ষাকুর বংশে অন্তরঙ্গা শক্তি সীতাদেবীর পতিরূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন। তাঁর পিতা মহারাজ দশরথের আজ্ঞানুসারে তিনি তাঁর পত্নী এবং কনিষ্ঠ ভ্রাতাসহ বনে গমন করেছিলেন এবং দীর্ঘকাল সেখানে বসবাস করেছিলেন।
অত্যন্ত শক্তিশালী দশমুণ্ড রাবণ তাঁর প্রতি মহা অপরাধ করেছিল এবং তার ফলে চরমে সে বিনাশপ্রাপ্ত হয়েছিল। পরমেশ্বর ভগবান শ্রীরামচন্দ্র, তাঁর প্রিয়তমা সীতার বিরহে ব্যথিত হয়ে (ত্রিপুর দগ্ধ করতে ইচ্ছুক) মহাদেবের মতো ক্রোধে আরক্তিম নয়নে রাবণের নগরী লঙ্কার প্রতি দৃষ্টিপাত করেছিলেন।
তখন সমুদ্র ভয়ে কম্পমান হয়ে তাঁকে পথ প্রদান করেছিলেন, কেননা তাঁর আত্মীয়-স্বজন, জলচর মকর, সর্প, কুমীর প্রভৃতি ভগবানের ক্রোধাগ্নির তাপে দগ্ধ হচ্ছিল।
রাবণ যখন যুদ্ধ করছিল তখন তার বক্ষঃস্থলের সঙ্গে সংঘর্ষ হওয়ার ফলে দেবরাজ ইন্দ্রের বাহন ঐরাবত হস্তীর দন্তরাজি ভগ্ন হয়েছিল এবং তাদের ভগ্ন অংশসমূহ ইতস্তত বিক্ষিপ্ত হওয়ায় দিকসমূহ আলোকিত হয়েছিল, রাবণ তখন তার শক্তির গর্বে গর্বিত হয়ে উভয় পক্ষের সৈন্যদের মধ্যে অট্টহাস্য করতে করতে বিচরণ করেছিল।
কিন্তু শ্রীরামচন্দ্র সেই পরস্ত্রী হরণকারী রাবণের সেই হাস্যকে তাঁর ধনুকের টঙ্কার মাত্রই প্রাণের সঙ্গে বিনাশ করেছিলেন।”
"পৃথিবী যখন অসুররূপ নৃপতিদের সৈন্যসমূহের দ্বারা ভারাক্রান্ত হয়েছিল, তখন সে ভার অপনোদনের জন্য ভগবান তাঁর অংশসহ আবির্ভূত হন। সুন্দর কৃষ্ণবর্ণ কেশদামসহ ভগবান তাঁর আদিরূপে আবির্ভূত হয়ে অলৌকিক কার্যকলাপ সম্পাদন করার মাধ্যমে তাঁর অপ্রাকৃত মহিমা বিস্তার করেন।
তাঁর মহিমা কেউই যথাযথভাবে অনুমান করতে পারে না। শ্রীকৃষ্ণ যে পরমেশ্বর ভগবান সে সম্বন্ধে কোন সন্দেহ নেই। মাতৃক্রোড়স্থিত ক্ষুদ্র শিশুরূপে বিশাল শরীরা পুতনা রাক্ষসীর প্রাণবধ, তিনমাসের শিশু অবস্থায় পদাঘাতে শকট ভঞ্জন,
হামাগুড়ি দিয়ে গমনপূর্বক গগনস্পর্শী অতি উচ্চ অর্জুনবৃক্ষযুগলের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে তাদের উৎপাটন, এই সমস্ত কার্য স্বয়ং ভগবান ছাড়া আর কার পক্ষে সম্ভব? যখন গোপ বালকেরা এবং তাদের পশুরা যমুনার বিষাক্ত জল পান করেছিল, ভগবান (তাঁর বাল্য অবস্থায়) তাঁর কৃপাপূর্ণ দৃষ্টিপাতের দ্বারা তাদের পুনরুজ্জীবিত করেছিলেন।
যমুনার জলকে বিশুদ্ধ করার জন্য তাতে ঝাঁপ দিয়ে তিনি খেলার ছলে বিষের তরঙ্গ উদ্গীরণকারী কালীয় নাগকে দণ্ড দান করেছিলেন। পরমেশ্বর ভগবান ব্যতীত কে এইপ্রকার অসম্ভব কার্য সম্পাদন করতে পারে?
কালীয় নাগকে দণ্ড দান করার পর সেই রাত্রেই যখন ব্রজবাসীরা নিশ্চিন্তে নিদ্রা মগ্ন ছিলেন, তখন শুষ্ক পাতা থেকে বনে দাবানল প্রজ্বলিত হওয়ার জন্য ব্রজবাসীদের জীবন সংশয় হয়ে উঠলে ভগবান বলদেবসহ কেবলমাত্র তাঁর চক্ষু নিমীলন করার মাধ্যমে তাঁদের রক্ষা করেছিলেন। এমনই অলৌকিক ভগবানে.. কার্যকলাপ।”
“গোপরমণী (শ্রীকৃষ্ণের মাতা যশোদা) যখন প্রচুর রজ্জুর দ্বারা শ্রীকৃষ্ণকে বন্ধন করার জন্য চেষ্টা করতে লাগলেন, তাঁকে বন্ধন করার পক্ষে সে সমস্ত রজ্জুই অপর্যাপ্ত বলে প্রতিভাত হয়েছিল। অবশেষে হতাশ হয়ে সেই প্রয়াস ত্যাগ করলে শ্রীকৃষ্ণ ধীরে ধীরে জ্বগুন করার ছলে তাঁর মুখ ব্যাদন করেছিলেন;
তখন তাঁর মা তাঁর মুখের ভিতর সমস্ত ব্রহ্মাণ্ড দর্শন করে মনে মনে আশঙ্কিত হয়ে উঠলেও তাঁর পুত্রের যোগমায়ার প্রভাবে তিনি ভিন্নভাবে আশ্বস্ত হয়েছিলেন। শ্রীকৃষ্ণ তাঁর পিতা নন্দ মহারাজকে বরুণপাশের ভয় থেকে রক্ষা করেছিলেন,
এবং ময়দানবের পুত্র যখন গোপবালকদের পর্বতের গুহায় আটক করে রেখেছিল, তখন তিনি তাদের রক্ষা করেছিলেন। ব্রজবাসীরা যখন সারাদিন কঠোর পরিশ্রম করার ফলে রাত্রে গভীর নিদ্রায় মগ্ন হতেন, তখন শ্রীকৃষ্ণ তাঁদের চিজ্জগতের সর্বোচ্চ লোকে উন্নীত করে পুরষ্কৃত করতেন।
এই সমস্ত কার্যকলাপ অপ্রাকৃত এবং তা নিঃসন্দেহে শ্রীকৃষ্ণের ভগবত্তা প্রমাণ করে। বৃন্দাবনের গোপেরা যখন শ্রীকৃষ্ণের নির্দেশে ইন্দ্রের যজ্ঞ বন্ধ করে দিয়েছিলেন, তখন সাতদিন ধরে নিরস্তর মুষলধারায় বৃষ্টি হতে থাকলে বৃন্দাবন ভেসে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল।
ব্রজবাসীদের প্রতি তাঁর অহৈতুকী কৃপার প্রভাবে শ্রীকৃষ্ণ তখন সাত বছর বয়স্ক বালক হওয়া সত্ত্বেও ব্ৰজ পশুদের রক্ষা করার জন্য গোবর্ধন পর্বতকে সাত দিন একটি ছাতার মতো এক হাতে ধারণ করেছিলেন।
ভগবান যখন শুভ্র চন্দ্রকিরণে উদ্ভাসিত নিশিতে বৃন্দাবনের বনে মধুর সঙ্গীতের দ্বারা ব্রজবধূদের কামপীড়া উদ্দীপিত করে রাসনৃত্য করতে উন্মুখ হবেন, তখন ধনাঢ্য কুবেরের অনুচর শব্ঙ্খচূড় নামক দৈত্য সেই ব্রজরমণীদের হরণ করবে এবং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তখন তার ধড় থেকে মস্তকটি ছেদন করবেন।
প্রলম্ব, ধেনুক, বক, কেশী, অরিষ্ট, চাপুর, মুষ্টিক, কুবলয়াপীড় হস্তী, কংস, যবন, নরকাসুর এবং পৌণ্ড্রকের মতো অসুরেরা তথা শাল্বের মতো মহারথী, দ্বিবিদ বানর এবং কবল, দম্ভবক্র, সপ্তবৃষ, শম্বর, বিদুরথ এবং রুক্মি প্রমুখ প্রসিদ্ধ রাজাগণ, এবং কাম্বোজ, মৎস্য, কুরু, সৃঞ্জয় এবং কেকয় প্রমুখ মহান যোদ্ধাগণ সাক্ষাৎ শ্রীহরির সঙ্গে অথবা বলদেব, অর্জুন, ভীম ইত্যাদি নামে তাঁরই সঙ্গে প্রচণ্ড যুদ্ধ করবে।
এইভাবে নিহত হওয়ার ফলে এই সমস্ত অসুরেরা নির্বিশেষ ব্রহ্মজ্যোতি প্রাপ্ত হবে অথবা বৈকুণ্ঠলোকে ভগবানের স্বীয় ধাম প্রাপ্ত হবে।
কালক্রমে মানুষেরা যখন সঙ্কুচিত বুদ্ধি এবং অল্প আয়ুসম্পন্ন হবে, তখন তাদের পক্ষে বৈদিক জ্ঞান হৃদয়ঙ্গম করা কঠিন হবে বলে বিবেচনা করে ভগবান সত্যবতীর পুত্র (ব্যাসদেব) রূপে আবির্ভূত হয়ে যুগের পরিস্থিতি অনুসারে কোয়েলী কল্পবৃক্ষকে বিভিন্ন শাখায় বিভক্ত করবেন।
নাস্তিক অসুরেরা বৈদিক বিজ্ঞানে অত্যন্ত দক্ষ হয়ে, মহাবিজ্ঞানী ময়দানব কর্তৃক নির্মিত মহাকাশযানে চড়ে গগনমার্গে অদৃশ্যভাবে বিচরণ করবে, তখন তাদের মোহাচ্ছন্ন করার জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয় বুদ্ধ রূপে আবির্ভূত হয়ে তিনি উপধর্ম প্রচার করবেন।”
“তারপর কলিযুগের শেষে, যখন তথাকথিত সধু এবং উচ্চতর তিন বর্ণের সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের গৃহেও ভগবানের কথা আলোচনা হবে না এবং যখন রাষ্ট্রের শাসন-ব্যবস্থা জনসাধারণ কর্তৃক নির্বাচিত শূদ্র অথবা তার থেকেও নিকৃষ্ট স্তরের মানুষদের হাতে ন্যস্ত হবে,
এবং যখন স্বাহা, স্বধা, বষট্ ইত্যাদি বৈদিক মন্ত্র আর শোনা যাবে না, তখন ভগবান পরম দণ্ডদাতারূপে আবির্ভূত হবেন। সৃষ্টির প্রারম্ভে তপস্যা, আমি (ব্রহ্মা) এবং প্রজাপতিগণ তারপর স্থিতি সময়ে জীবিষ্ণু, নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা সমন্বিত দেবতাগণ এবং বিভিন্ন লোকের রাজাগণ, এবং সংহারকালে অধর্ম, রুদ্র, এবং ক্রোধী নাস্তিক ইত্যাদি এরা সকলেই বহু শক্তিধারী ভগবানের শক্তির বিভিন্ন প্রতিনিধি।
শ্রীবিষ্ণুর পরাক্রম কে সম্পূর্ণরূপে বর্ণনা করতে পারে? কোন বৈজ্ঞানিক ব্রহ্মাণ্ডের সমস্ত পরমাণু গণনা করে থাকতে পারে, কিন্তু তার পক্ষেও বিষ্ণুর বীর্য গণনা করা সম্ভব নয়। কেননা তিনি তাঁর ত্রিবিক্রম অবতারে এই ব্রহ্মাণ্ডের সর্বোচ্চ লোক সত্যলোকেরও ঊর্ধ্বে প্রকৃতির তিন গুণের সাম্য অবস্থা পর্যন্ত তাঁর পদ-বিক্ষেপ করেছিলেন, এবং তার ফলে সমস্ত ব্রহ্মাণ্ড কম্পমান হয়েছিল।
আমি বা তোমার অগ্রজ মুনিগণও সর্বশক্তিমান পরমেশ্বর ভগবানকে পূর্ণরূপে জানতে পারি না, সুতরাং আমাদের পরে যাদের জন্ম হয়েছে তারা কিভাবে তাঁকে জানবে? ভগবানের প্রথম অবতার শেষ সহস্র বদনে তাঁর গুণাবলী নিরন্তর গান করেও এখনও পর্যন্ত তার সীমা পাননি।
যাঁরা নিষ্কপটে পরমেশ্বর ভগবানের শরণাগত হয়েছেন, তাঁরা ভগবানের বিশেষ কৃপার প্রভাবে দুস্তর ভব-সমুদ্র উত্তীর্ণ হতে পারেন এবং ভগবানকে জানতে পারেন। কিন্তু যারা কুকুর শৃগালের ভক্ষ্য এই জড় দেহটির প্রতি আসক্ত, তারা কখনোই তা পারে না।"
“হে নারদ, যদিও ভগবানের শক্তি অজ্ঞেয় এবং অপরিমেয়, তথাপি তাঁর শরণাগত হওয়ার ফলে আমরা জানি কিভাবে তিনি তাঁর যোগমায়ার দ্বারা কার্য করেন। এইভাবে ভগবানের শক্তি তুমি, ভগবান শিব, দৈত্যশ্রেষ্ঠ প্রহ্লাদ, স্বায়ত্ত্বর মনু, তাঁর পত্নী শতরূপা, মনু-সন্তান প্রিয়ব্রত,
উত্তানপাদ, আকৃতি, দেবহূতি, প্রসুতি, প্রাচীনবার্হ, ঋভু, বেনের পিতা অঙ্গ, মহারাজ ধ্রুব, ইক্ষ্বাকু, ঐল, মুচকুন্দ, মহারাজ জনক, গাধি, রঘু, অম্বরীষ, সগর, গয়, নাহ, মান্ধাতা, অলক, শতধনু, অনু, রস্তিদেব, ভীষ্ম, বলি, অমূৰ্ত্তরয়, দিলীপ, সৌভরি, উতঙ্ক, শিবি, দেবল,পিঙ্গলাদ, সারস্বত, উদ্ভব, পরাশর, ডুরিবেশ, বিভীষণ, হনুমান, শুকদেব গোস্বামী, অর্জুন, অরিটসেন, বিদুর, শ্রুতদেব ইত্যাদি ব্যক্তিরা অবগত আছেন।
শুদ্ধ ভক্তের শরণাগত হওয়ার ফলে এবং ভক্তি যোগে তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করার ফলে স্ত্রী, শূদ্র, হণ, শবর আদি পাপজীবীরাও এমনকি পশু-পাখিরা পর্যন্ত ভগবত্তত্ত্ব বিজ্ঞান অবগত হয়ে মায়ার মোহময় বন্ধন থেকে মুক্ত হতে পারে।
ব্রহ্ম-উপলব্ধি শোকরহিত অসীম আনন্দে পূর্ণ। তা অবশ্যই পরম পুরুষ ভগবানের পরম পদ। তিনি নিত্য ক্ষোভরহিত এবং অভয়। তিনি জড় পদার্থের বিপরীত পূর্ণ চেতনায়। নির্মল এবং ভেদরহিত তিনি সমস্ত কারণ এবং কার্যের পরম কারণ।
তাঁর সকাম কর্মের উদ্দেশ্যে যজ্ঞ অনুষ্ঠানের প্রয়োজন হয় না, এবং মায়া তাঁর সামনে অবস্থান করতে পারে না। এইপ্রকার অপ্রাকৃত অবস্থায়, জ্ঞানী অথবা যোগীদের মতো, কৃত্রিমভাবে মনকে সংযত করার, মনোধর্মপ্রসূত জল্পনা কল্পনা করার অথবা ধ্যান করার প্রয়োজন হয় না,
ঠিক যেমন বর্ষার নিয়ন্ত্রণকারী দেবরাজ ইন্দ্রকে জল পাওয়ার জন্য কূপ খনন করার কষ্ট করতে হয় না। যা কিছু মঙ্গলময় সে সবেরই পরম প্রভু হচ্ছেন পরমেশ্বর ভগবান, কেননা জড় অথবা চিন্ময় অস্তিত্বে জীবের সমস্ত কার্যের ফল তিনিই প্রদান করেন।
তাই তিনি হচ্ছেন পরম উপকারী। প্রতিটি জীবই জন্মরহিত, তাই দেহের অভ্যন্তরে বিরাজমান বায়ুর মতো আত্মার বা জীবের অস্তিত্ব জড় দেহের বিনাশের পরেও বর্তমান থাকে।”
“হে পুত্র, আমি তোমাকে সংক্ষেপে পরমেশ্বর ভগবানের তত্ত্ব বর্ণনা করলাম, যিনি হচ্ছেন এই প্রকাশিত জগতের স্রষ্টা। সেই পরমেশ্বর ভগবান হরি বিনা এই ব্যক্ত এবং অব্যক্ত জগতের আর অন্য কোন কারণ নেই।
হে নারদ, এই ভগবত্তত্ত্ব-বিজ্ঞান, শ্রীমদ্ভাগবত পরমেশ্বর ভগবান সংক্ষেপে আমাকে বলেছিলেন। এই ভগবত্তত্ত্ব বিজ্ঞান হচ্ছে তাঁর বিভিন্ন শক্তির সমন্বয়ের বর্ণনা। তুমি এই বিজ্ঞান সম্প্রসারিত কর। নিষ্ঠা সহকারে এই ভগবত্তত্ত্ব তুমি বর্ণনা কর যাতে মানুষ সমস্ত জীবের পরমাত্মা এবং সমস্ত শক্তির পরম উৎস, পরমেশ্বর ভগবান শ্রীহরির প্রতি অপ্রাকৃত ভক্তি লাভ করতে পারে।
ভগবানের বিভিন্ন শক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত ভগবানের কার্যকলাপ, তাঁর শিক্ষা অনুসারে কীর্তন, অভিনন্দন এবং শ্রবণ করা উচিত। নিয়মিত ভাবে ভক্তি ও শ্রদ্ধা সহকারে তা করা হলে জীব কখনোই মায়ার দ্বারা মোহিত হবে না।”
শ্রীনন্দ রাখিল নাম নন্দের নন্দন। ১
যশোদা রাখিল নাম যাদু বাছাধন ॥ ২
উপানন্দ নাম রাখে সুন্দর-গোপাল । ৩
ব্রজবালক নাম রাখে ঠাকুর-রাখাল ॥ ৪
সুবল রাখিল নাম ঠাকুর কানাই । ৫
শ্রীদাম রাখিল নাম রাখাল রাজা ভাই ॥ ৬
ননীচোরা নাম রাখে যতেক গোপিনী । ৭
কালসোণা নাম রাখে রাধাবিনোদিনী ॥ ৮
কুব্জা রাখিল নাম পতিত-পাবন হরি । ৯
চন্দ্রাবলী নাম রাখে মোহন-বংশীধারী ॥ ১০
অনন্ত রাখিল নাম অন্ত না পাইয়া । ১১
কৃষ্ণ নাম রাখে গর্গ ধ্যানেতে জানিয়া ॥ ১২
কম্বমুনি নাম রাখে দেবচক্রপাণি। ১৩
বনমালী নাম রাখে বনের হরিণী ॥ ১৪
গজহস্তী নাম রাখে শ্রীমধুসূদন । ১৫
অজামিল নাম রাখে দেব নারায়ণ ॥ ১৬
পুরন্দর নাম রাখে দেব শ্রীগোবিন্দ । ১৭
দ্রৌপদী রাখিল নাম দেব দীনবন্ধু ॥ ১৮
সুদাম রাখিল নাম দারিদ্র্য-ভঞ্জন । ১৯
ব্রজবাসী নাম রাখে ব্রজের জীবন ॥ ২০
দর্পহারী নাম রাখে অর্জুন সুধীর। ২১
পশুপতি নাম রাখে গরুড় মহারীর ॥ ২২
যুধিষ্ঠির নাম রাখে দেব যদুবর। ২৩
বিদুর রাখিল নাম কাঙ্গালের ঠাকুর ॥ ২৪
বাসুকী রাখিল নাম দেব-সৃষ্টি স্থিতি। ২৫
ধ্রুবলোকে নাম রাখে ধ্রুবের সারথি ॥ ২৬
নারদ রাখিল নাম ভক্ত-প্রাণধন। ২৭
ভীষ্মদেব নাম রাখে লক্ষ্মী-নারায়ণ ॥ ২৮
সত্যভামা নাম রাখে সত্যের সারথি। ২৯
জাম্ববতী নাম রাখে দেব যোদ্ধাপতি ॥ ৩০
বিশ্বামিত্র নাম রাখে সংসারের সার। ৩১
অহল্যা রাখিল নাম পাষাণ-উদ্ধার ॥ ৩২
ভৃগুমুনি নাম রাখে জগতের হরি । ৩৩
পঞ্চমুখে রামনাম গান ত্রিপুরারি ॥ ৩৪
কুঞ্জকেশী নাম রাখে বলি সদাচারী । ৩৫
প্রহ্লাদ রাখিল নাম নৃসিংহ মুরারি ॥ ৩৬
বশিষ্ঠ রাখিল নাম মুনি-মনোহর। ৩৭
বিশ্বাবসু নাম রাখে নবজলধর ॥ ৩৮
সম্বর্ত্তক রাখে নাম গোবর্দ্ধনধারী । ৩৯
প্রাণপতি নাম রাখে যত ব্রজনারী ॥ ৪০
অদিতি রাখিল নাম আরতি-সুদন । ৪১
গদাধর নাম রাখে যমল-অর্জ্জুন ।। ৪২
মহাযোদ্ধা নাম রাখে ভীম মহাবল। ৪৩
দয়ানিধি রাখে নাম দরিদ্র সকল । ৪৪
বৃন্দাবন-চন্দ্র নাম রাখে বৃন্দাদুতী । ৪৫
বিরজা রাখিল নাম যমুনার পতি। ৪৬
বাণীপতি নাম রাখে গুরু বৃহস্পতি । ৪৭
লক্ষ্মীপতি নাম রাখে নাম সুমন্ত্র সারথি ।। ৪৮
সন্দীপনি নাম রাখে দেব অন্তর্যামী। ৪৯
পরাশর নাম রাখে ত্রিলোকের স্বামী।। ৫০
পদ্মযোনি নাম রাখে অনাদির আদি । ৫১
নট নারায়ণ নাম রাখিল সম্বাদী ।।৫২
হরেকৃষ্ণ নাম রাখে প্রিয় বলরাম। ৫০
ললিতা রাখিল নাম দু্র্ব্বাদলশ্যাম ।। ৫৪
বিশাখা রাখিল নাম অনঙ্গমোহন। ৫৫
সুচিত্রা রাখিল নাম শ্রীবংশীবদন। ৫৬
আযান রাখিল নাম ক্রোধ-নিবারণ। ৫৭
চণ্ডকশী নাম রাখে কৃত্তান্ত শাসন ॥ ৫৮
জ্যোতিষ্ক রাখিল নাম নীলকান্তমণি। ৫৯
গোপীকান্ত নাম রাখে সুদাম-ঘরণী। ৬০
ভক্তগণ নাম রাখে দেব জগন্নাথ। ৬১
দূর্ব্বাসা রাখেন নাম অনাথের নাথ। ৬২
রাসেশ্বর নাম রাখে যতেক মালিনী। ৬৩
সর্ব্ব-যজ্ঞেশ্বর নাম রাখেন শিবানী। ৬৪
উদ্ধব রাখিল নাম মিত্রহিত কারী । ৬৫
অক্রুর রাখিল নাম ভব ভয় সাথী।। ৬৬
গুঞ্জমালী নাম রাখে নীল পীতবাস । ৬৭
সর্ব্ববেত্তা রাখে নাম দ্বৈপায়ন ব্যাস।। ৬৮
অষ্টসখী নাম রাখে ব্রজের ঈশ্বর। ৬১
সুরলোকে রাখে নাম অখিলের সার। ৭০
বৃষভানু নাম রাখে পরম ঈশ্বর। ৭১
স্বর্গবাসী রাখে নাম দেব পরাৎপর। ৭২
পুলোমা রাখেন নাম অনাথের সখা। ৭৩
রসসিন্ধু নাম রাখে সখী চিত্রলেখা। ৭৪
চিত্ররথ নাম রাখে আরতি দমন। ৭৫
পুলস্ত্য রাখিল নাম নয়ন-রঞ্জন ॥ ৭৬
কশ্যপ রাখেন নাম রাস রাসেশ্বর। ৭৭
ভাণ্ডারীক নাম রাখে পূর্ণ-শশধর ॥ ৭৮
সুমালী রাখিল নাম পুরুষ-প্রধান । ৭৯
পুরঞ্জন নাম রাখে ভক্তগণ প্ৰাণ ॥ ৮০
রজকিনী নাম রাখে নন্দের-দুলাল। ৮১
আহ্লাদিনী নাম রাখে ব্রজ়ের-গোপাল ॥ ৮২
দৈবকী রাখিল নাম নয়নের মণি। ৮৩
জ্যোতির্ময় নাম রাখে যাজ্ঞবল্ক্য মুনি ॥ ৮৪
অত্রিমুনি নাম রাখে কোটি চন্দ্রেশ্বর । ৮৫
গৌতম রাখিল নাম দেব বিশ্বম্ভর ।।৮৬
মরীচি রাখিল নাম অচিন্ত্য অচ্যুত। ৮৭
জ্ঞানাতীত নাম রাখে সৌনকাদি সুত ॥ ৮৮
রুদ্রগণ নাম রাখে দেব মহাকাল। ৮৯
বসুগণ রাখে নাম ঠাকুর দয়াল ॥ ৯০
সিদ্ধগণ নাম রাখে পুতনা-নাশন । ৯১
সিদ্ধার্থ রাখিল নাম কপিল তপোধন ॥ ৯২
ভাগুরি রাখিল নাম অগতির গতি। ৯৩
মৎস্যগন্ধা নাম রাখে ত্রিলোকের পতি ॥ ৯৪
শুক্রাচার্য্য রাখে নাম অখিল বান্ধব । ৯৫
বিষ্ণুলোকে নাম রাখে দেব শ্রীমাধব ॥ ৯৬
যদুগণ নাম রাখে যদুকুলপতি । ৯৭
অশ্বিনীকুমার নাম রাখে সৃষ্টি-স্থিতি ॥ ৯৮
অর্য্যমা রাখিল নাম কাল-নিবারণ । ৯৯
সত্যবতী নাম রাখে অজ্ঞান-নাশন ॥ ১০০
পদ্মাক্ষ রাখিল নাম ভ্রমর-ভ্রমরী । ১০১
ত্রিভঙ্গ রাখিল নাম যত সহচরী ॥ ১০২
বঙ্কচন্দ্র নাম রাখে শ্রীরূপমঞ্জরী । ১০৩
মাধুরী রাখিল নাম গোপী-মনোহারী ॥ ১০৪
মঞ্জুমালী নাম রাখে অভীষ্ট-পূরণ । ১০৫
কুটিলা রাখিলা নাম মদন-মোহন ॥ ১০৬
মঞ্জুরী রাখিল রাম কৰ্ম্মবন্ধ-নাশ । ১০৭
ব্রজবন্ধু নাম রাখে পূর্ণ-অভিলাষ ॥ ১০৮
ব্রহ্মোবাচ – রক্ষ রক্ষ হরে মাঞ্চ নিমগ্নং কামসাগরে। দুষ্কীর্ত্তিজলপূর্ণে চ দুষ্পারে বহুসঙ্কটে ৷৷ ১ ৷৷ ভক্তিবিস্মৃতিবীজে চ বিপৎসোপানদুস্তরে। অতীব নিৰ্ম্মলজ্ঞানচক্ষুঃ প্রচ্ছন্নকারিণে ৷৷ ২৷
জন্মোসি অসহিতে যোািক্রৌঘসস্কুলে। রতিস্রোতঃসমাযুক্তে গম্ভীরে ঘোর এব চ ৷৷ ৩৷৷ প্রথমামৃতরূপে চ পরিণামবিষালয়ে। যমালয়প্রবেশায় মুক্তিদ্বারাতিবিস্মৃতৌ ॥ ৪॥
বুদ্ধ্যা তরণ্যা বিজ্ঞানৈরুদ্ধরাম্মানতঃ স্বয়ম্। স্বপ্নঞ্চ | ত্বং কর্ণধারঃ প্রসীদ মধুসূদন ৷৷ ৫৷ মবিধাঃ কতিচিন্নাথ নিযোজ্যা ভৰকৰ্ম্মণি। সস্তি বিশ্বেশ বিধয়ো হে বিশ্বেশ্বর মাধব ৷ ৬৷৷
ন কৰ্ম্মক্ষেত্রমেবেদং ব্রহ্মলোকেঽয়মীলিতঃ। তথাপি নঃ স্পৃহা কামে ভুঙক্তিব্যবধায়কে। ৭৷৷ হে নাথ করুণাসিন্ধো কৃপাং কুরু। ত্বং মহেশ মহাজ্ঞতা দুঃস্বপ্নং মাং ন দৰ্শয় ৷৷ ৮৷৷
ইত্যুক্ত্বা জগতাং ধাতা বিরাম সনাতনঃ। ধ্যায়ং ধ্যায়ং মৎপদাজং শশ্বৎ সম্মার মামিতি। ৯৷৷ ব্ৰহ্মণা চ কৃতং স্তোত্রং ভক্তিযুক্তশ্চ যঃ পঠেৎ। স চৈবাকৰ্ম্মবিষয়ে ন নিমণো ভবেদ ধ্রুবম্ ৷৷ ১০৷৷
মম মায়াং বিনির্জিত স জ্ঞানং লভতে ধ্রুব। ইহলোকে ভক্তিযুক্তো মদ্ভক্তপ্রবরো ভবেৎ৷৷ ১১ ৷৷
ইতি শ্রীব্রহ্মদেব-কৃতং শ্রীকৃষ্ণস্তোত্রং সম্পূর্ণম্।
*************************************************************
শ্রীরাধাচরণাদ্বন্দ্বং বন্দে বৃন্দাবনাশ্রিতম্। সানন্দ ব্রহ্মরুপ্রেন্দ্র বন্দিতং তদহহর্নিশম্।। ত্বং দেবি জগতাং মাতবিষ্ণুমায়া সনাতনী। কৃষ্ণপ্রাণাধিকে দেবি বিষ্ণুপ্রাণাধিকে শুভে৷৷
কৃষ্ণপ্রেমময়ী শক্তিঃ কৃষ্ণসৌভাগ্য রূপিণী। কৃষ্ণভক্তি প্রদে রাধে নমস্তে মঙ্গলপ্রদে৷৷ অদ্য মে সফলং জন্ম সার্থকং জীবনং মম। পূজিতাসি ময়া যা চ সা চ কৃষ্ণেন পূজিত।
সুষমা মুখমণ্ডলাং শ্রুতিকাস্তি মনোহরাম্। বরাঙ্গরত্নভূষিতাং নমামি কীর্ত্তিদাসূতাম্।। সুদীর্ঘনেত্ৰ নলিনীং পীনোন্নত পয়োধরাম্। কৃষ্ণ প্রলোভিনীং নমামি কীৰ্ত্তিদাসূতাম্।।
নাসিকারত্ব উজ্জ্বলাং কুন্দবদ্দন্ত পক্তিকাম্। সুস্মিত চারুবদনাং নমামি কীৰ্ত্তিদাসূতাম্৷৷ করেণ লীলাপঙ্কজাং অলিভিঃ পরিবেষ্টিতাম্। চিকুর বেণীমণ্ডিতাং নমামি কীৰ্ত্তিদাতাম্৷৷
হরিবিনিন্দ্যকীটং বিশাল নিতম্বতটীম্। উরসি রত্নহারিকাং নমামি কীৰ্ত্তিদাসূতাম্।। সুগন্ধ অহ অনিলাং গতিহংসিনী গঞ্জিতাম্। গুণেঃ সর্ববরীয়সীং নমামি কীৰ্ত্তিদাসূতাম্।।
স্মিতকান্তি নথশ্রেণীং প্রগলভিকাং সুভাষিনীম্। কৃষ্ণচন্দ্র চকোরিণীং নমামি কীৰ্ত্তিদাসূতাম্৷৷ এতচ্ছ্রীরাধিকাষ্টকং পঠেদ্ যঃ শ্রদ্ধয়ান্বিতঃ। প্রাপ্যতঙ্ঘ্রিযুগ্মকং ভবাব্ধি সত্তরেৎ সুখম্ ।।
— ইতি শ্রীরাধিকাষ্টকং সমাপ্তম্।
তুলসী মা বৃন্দা। ভগবান শ্রী কৃষ্ণের প্রিয় তুলসী কে পূজা করিলে মোক্ষ প্রাপ্তি হয়। প্রতিদিন তুলসীর অর্চনা করিলে কৃষ্ণ পদ প্রাপ্তি হয়।
প্রতিদিন সকালে স্নান করে উঠে তুলসী তলায় জল ঢালিবেন এবং তুলসীর প্রণাম মন্ত্র পাঠ করিবেন। তুলসীর যথা শক্তি উপচারে পূজা করিয়া মা তুলসীর স্তোত্রম মন্ত্র পাঠ করিবেন।
জগদ্ধাত্রী নমস্তুভ্যং বিষ্ণোশ্চ প্রিয়বল্লতে। যতো ব্রহ্মাদয়ো দেবাঃ সৃষ্টিস্থিত্যন্ত কারিণঃ। নমস্তুলসি কল্যাণি নমো বিষ্ণুপ্রিয়ে শুভে। নমঃ মোক্ষপ্রদে দেবি নমঃ সম্পৎ প্রদায়িকে।
তুলসী পাতৃ মাং নিতাৎ সর্বাপদ্ভোঽপি সর্বদা। কীৰ্ত্তিতাপিস্মৃত বাপি পবিত্রয়তি মানবম্।। নমামি শিবসা দেবীং তুলসীং বিলসত্তনম্। যাং দৃষ্টা পাপিনোমতা মুচ্যন্তে সর্বাকিলতিবসাত ৷৷।
তুলস্যা রক্ষিতঃ সর্বং জগদেতচ্চরাচরম্। যা বিনিহস্তিপাপানি দুষ্টা বা পাপীভির্নরৈঃ।। নমস্তলস্যানিতরাং যসো বদ্ধাঞ্জলিং কলৌ। কলয়ন্তি সুখং সর্বে স্ত্রিয়ো বৈশ্যাস্তথাপরে।।
তুলস্যাঃ পল্লবং বিষ্ণো শিরস্যারোপিতং কলেী । কলয়ন্তি সুখং সর্বে স্ত্রিয়ো বৈশ্যাস্তথাপরে। তুলস্যাঃ পল্লবং বিষ্ণোঃ শিরস্যারোপিতং কলো। আরোপয়তি সর্বাণি শ্রেয়াংসি বর মস্তকে।
তুলস্যাং সকলা দেবা বসন্তি সততং যতঃ। অতস্তামর্চয়েলোকে সর্বান দেবান সমচয়েৎ । নামাস্তুলসি সর্বজ্ঞে পুরুষোত্তমবল্লভে। পাহি মাং সর্বপাপেতাঃ সর্বসম্পৎ প্রদায়িকে।
ইতি স্তোত্রং পুরা গীতং পুণ্ডরীকেণ ধীমতা। বিষ্ণুমর্চয়তা নিত্যং শোভনৈস্তুলসী দলৈঃ৷৷ তুলসী শ্ৰীমহালক্ষ্মীর্বিদ্যা বিদ্যা যশস্বিনী। ধৰ্মা ধর্মাননা বৃন্দা দেবদেব নমঃ প্রিয়া।।
লক্ষ্মীপ্রিয়সখী দেবী দৌভূমির চলা চলা। ষোড়শৈতানি নামানি তুলস্যাঃ কীর্তয়েন্নর। লভতে সুতরাং ভক্তিমন্তে বিষ্ণুপদং তথা। তুলসী ভূর্মহালক্ষ্মীঃ পদ্মিনী শ্রীহরিপ্রিয়া।।
তুলসী শ্রীসখী শুভে পাপহারিণি পূণ্যদে। নমস্তে নারদনুতে নারায়ণ মনঃ প্রিয়ে।।” ইতি পুণ্ডরীককৃতং তুলসী স্তোত্রম সম্পূর্ণম্।
ভগবান শেষনাগের / অনন্তনাগের অবতার ভগবান শেষনাগের / অনন্তনাগের শক্তি, পরাক্রম ও অবতারের কথা বিভিন্ন পুরাণে উল্লেখ আছে। পুরাণ অনুসারে, শেষনাগের / অনন্তনাগের 6 টি অবতারকে বিবেচনা করা হয় -: 1. সত্য যুগে মহর্ষি পাণিনি রূপ ধারণ করেছিলেন। 2. সত্য যুগে মহর্ষি পতঞ্জলি রূপ ধারণ করেছিলেন। 3 ত্রেতা যুগে লক্ষ্মণ রূপ ধারণ করেছিলেন। 4 দ্বাপর যুগে বলরাম রূপ ধারণ করেছিলেন। 5 কলিযুগে মহর্ষি চরক রূপ ধারণ করেছিলেন। 6 কলিযুগে রামানুজাচার্য রূপ ধারণ করেছিলেন।
শ্রীকৃষ্ণ
বেদ শব্দের অর্থ জ্ঞান এবং সেটি ভগবান থেকে প্রকাশিত হচ্ছে. বেদ শাশ্বত ও অপৌরুষেয় পরম জ্ঞান নিত্য ও কোন মানুষের রচিত নয়. শাস্ত্রীয় ইতিহাস অনুসারে, সৃষ্টির আদিতে ব্রক্ষ্মান্ডের প্রথম জীব স্বয়ম্ভু ব্রক্ষ্মা এই বেদ-জ্ঞান লাভ করেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণর নিকট থেকে, তার বেণুধ্বনির মাধ্যমে।
যো ব্রক্ষ্মাণং বিদধাতি পূর্ব্বং যো বৈ বেদাংশ্চ গাপয়তি স্ম কৃষ্ণঃ.
(- 1/২4 গোপালতাপনী উপনিষদ)
"যিনি সৃষ্টির আদিতে ব্রক্ষ্মাকে বৈদিক জ্ঞান উপদেশ করেছিলেন এবং পূর্বে বৈদিক জ্ঞান বিস্তার করেন, তিনি শ্রীকৃষ্ণই."
ব্রক্ষ্মসংহিতায় শ্রীকৃষ্ণকে বেদের সারসত্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে (তুষ্টাব বেদসারেণ স্তোত্রেণানেন কেশবম - 5/২8). বেদ অনুসারে, ব্রক্ষ্মা ভগবান শ্রীবিষ্ণু হতে উদ্ভূত, আর শ্রীকৃষ্ণ শ্রীবিষ্ণুরও উৎস. জড় জগতে ভগবানের
তিনটি পুরুষাবতার - বিষ্ণুরূপ প্রকাশিতঃ
(1) প্রথম পুরুষাবতারঃ কারণোদকশায়ী বিষ্ণু বা মহাবিষ্ণু - কারণ-উদক সাগরে (কার্যকারণ মহাসাগর) শায়িত এই মহাবিষ্ণুর বিরাট শরীর থেকে কোটি কোটি ব্রক্ষ্মান্ড (universes এর ক্লাস্টার) প্রকাশিত হয়, মহাপ্রলয়ে (অবলুপ্তি) সমস্ত জড় ব্রক্ষ্মান্ডগুলি ধ্বংস হয়ে সূক্ষ্ম জড় উপাদনরূপে (মহত্তত্ব) তাঁর দিব্য শরীরে বিলীন হয়.
(২) দ্বিতীয় পুরুষাবতারঃ গর্ভোদকশায়ী বিষ্ণু - মহাবিষ্ণু নিজেকে কোটি কোটি রূপে বিস্তার করে প্রতিটি ব্রক্ষ্মান্ডে প্রবেশ করে ব্রক্ষ্মান্ডের গর্ভোদকে শয়ন করেন. তারপর ব্রক্ষ্মাকে সৃষ্টি করেন. ব্রক্ষ্মার মাধ্যমে সূর্য ও চতুর্দশ ভুবন বা গ্রহলোকসমূহ (গ্রহ সিস্টেম) সৃষ্টি করেন.
(3) তৃতীয় পুরুষাবতারঃ - ক্ষীরোদকশায়ী বিষ্ণু - প্রতি ব্রক্ষ্মান্ডে শ্রীবিষ্ণু নিজেকে অসংখ্য রূপে বিস্তার করে করে জীবসত্তাকে ভগবদধামে ফিরে আসতে সাহায্য করার জন্য প্রত্যেক জীব হৃদয়ে পরমাত্মারূপে অবস্থান করেন.
এইভাবে, কোটি কোটি, অসংখ্য অনন্তরূপে ভগবান নিজেকে বিস্তার করেন, কিন্তু তিনি 'অদ্বৈতম' (অ দ্বৈত) তিনি এক ও অভিন্ন এবং সকল রূপের পরম উৎস শ্রীকৃষ্ণ স্বরূপ, এটিই বৈদিক শাস্ত্রের সিধান্ত. ব্রক্ষ্মসংহিতায় বলা হয়েছে (5/33) -
অদ্বৈতম-অচ্যুতম-অনাদিম-অনন্তরূপম আদ্যং পুরাণপুরুষং নবযৌবনঞ্চ.
বেদেষু দুর্লভম-অদুর্লভম-আত্মভক্তৌ গোবিন্দম-আদি পুরুষং তমহং ভজামি ..
"যিনি অদ্বৈত, অচ্যুত, অনাদি, অনন্তরূপসম্পন্ন, আদি পুরাণপুরুষ হয়েও নিত্যনবনবায়মান যৌবনসম্পন্ন সুন্দর পুরুষ, বেদাদি শাস্ত্র পাঠে দুর্লভ কিন্তু শুদ্ধ আত্মভক্তির লভ্য, সেই আদিপুরুষ গোবিন্দকে আমি ভজনা করি."
বেদে সর্বদেবতার উপাস্য ভগবান রূপে শ্রীবিষ্ণুকে স্তুতি করা হয়েছে, যেমন ঋগবেদে (1/২২/২0) বলা হয়েছে -
ওঁ তদবিষ্ণোঃ পরমং পদং সদা পশ্যন্তি সূরয়ো দিবীব চক্ষুরাততম.
তদবিপ্রাসো বিপন্যবো জাগৃবাংষঃ সমিন্ধতে বিষ্ণোর্যৎ পরমং পদম ..
"পরমেশ্বর বিষ্ণুই হচ্ছেন পরম সত্য. সুরগন তাঁর পাদপদ্ম দর্শনে সর্বদাই উদগ্রীব. সূর্যের মতোই ভগবান তাঁর শক্তিরশ্মির বিস্তার করে সর্বত্র ব্যাপ্ত আছেন. " ঋগবেদে 1/২২/17, 1/২২/18, 1/154/1, 1/15২/২, 1/154/3, 1/154/4, 1/154/6 নং মন্ত্রে বিষ্ণুর কথা বলা হয়েছে.
অথর্ববেদে বলা হয়েছে, যো ব্রক্ষ্মাণং বিদধাতি পূর্বং যো বৈ বেদাংশ্চ গাপয়তি স্ম কৃষ্ণঃ. অর্থাৎ - "ব্রক্ষ্মা, যিনি পূর্বকালে জগতে বৈদিক জ্ঞান প্রদান করেন, সেই জ্ঞান তিনি সৃষ্টির আদিতে যাঁর কাছ থেকে প্রাপ্ত হন তিনি হচ্ছেন শ্রীকৃষ্ণ."
শ্রীবিষ্ণু শ্রীকৃষ্ণেরই প্রকাশ বা বিস্তার, শাস্ত্রের সিধান্ত, যেমন সকল বেদ উপনিষদের সার গীতোপনিষদ, ভগবদগীতায় শ্রীকৃষ্ণকে বিষ্ণু বলে সম্বোধন করা হয়েছে - শমং চ বিষ্ণো (11/২4), প্রতপন্তি বিষ্ণো - (11/30), আদিত্যানাম অহং বিষ্ণু (10/২1) ইত্যাদি. শ্রীকৃষ্ণই শ্রীবিষ্ণুরূপে সর্বজীবের অন্তরস্থিত পরমাত্মা - অহমাত্মা গূঢ়াকেশ সর্বভূতাশয়স্থিতঃ (10/২0). বিষ্ণুমূর্তি-সমূহ, রাম-নৃসিংহ ইত্যাদি অবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণরই প্রকাশ, অংশ, কলা. শ্রীকৃষ্ণই স্বয়ং ভগবান (এতে চাংশ কলাঃ পুংসঃ কৃষ্ণস্ত ভগবান স্বয়ম - ভাগবতম 1/3/২8). ভগবান শ্রীকৃষ্ণ পূর্ণপরাৎপর পুরুষ, সেজন্য তাঁর থেকে অসংখ্য ভগবৎ-রূপ বিস্তার হলেও তিনি তাঁর পূর্ণস্বরূপে নিত্যবিরাজমান. শ্রীঈশোপনিষদে যেমন বলা হয়েছে (1 আবাহন)
ওঁ পূর্ণমদঃ পূর্ণমিদং পূর্ণাৎ পূর্ণাৎ পূর্ণমুদচ্যতে.পূর্ণস্য পূর্ণমাদায় পূর্ণমেবাবশিষ্যতে ..
"পরমেশ্বর ভগবান সর্বতোভাবে পূর্ণ. তিনি সম্পূর্ণভাবে পূর্ণ বলে এই দৃশ্যমান জগতের মতো তাঁর থেকে উদ্ভূত সব কিছুই সর্বতোভাবে পূর্ণ. যা কিছু পরম পূর্ণ থেকে উদ্ভূত হয়েছে তা সবই পূর্ণ. কিন্তু যেহেতু তিনি হচ্ছেন পরম পূর্ণ, তাই তাঁর থেকে অসংখ্য অখন্ড ও পূর্ণ সত্তা বিনির্গত হলেও তিনি পূর্ণরূপেই অবশিষ্ট থাকেন. "
ভগবদগীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণর কয়েকটি উক্তি
বেদ্যং পবিত্রং ওঙ্কার - 9/17 - আমাকে পবিত্র ওঙ্কার বলে জানবে.
প্রণবঃ সর্ববেদেষু - 7/8 - সমস্ত বেদে উল্লেখিত প্রণব (ভগবানের নির্বিশেষ নাম) আমিই.
বেদে চ প্রথিতঃ পুরুষোত্তম - 15/18 - বেদে আমি পুরুষোত্তম নামে খ্যাত
বেদানং সামবেদোহস্মি - 10/২২ - সমস্ত বেদের মধ্যে আমি সামবেদ
ঋক সাম যজুরেব চ - 9/17 - ঋক, সাম, যজুর্বেদাদিও আমি
বৃহৎসাম তথা সাম্নাং গায়েত্রী ছন্দসামহম - 10/35 - আমি সামবেদের মধ্যে বৃহৎসাম, সমস্ত ছন্দের মধ্যে গায়েত্রী.
অহং হি সর্বযজ্ঞানাং ভোক্তা চ প্রভুরেব চ - 9/২4 - আমি সমস্ত যজ্ঞের ভোক্তা, প্রভু.
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আরও বিপ্লবাত্মক কথা বলেছেন - তিনি বলেন (গীতা ২/4২)
"বিবেকবর্জিত লোকেরাই বেদের পুষ্পিত বাক্যে আসক্ত হয়ে স্বর্গসুখ ভোগ, উচ্চকুলে জন্ম, ক্ষমতা লাভ-আদি সকাম কর্মকেই জীবনের চরম উদ্দেশ্য বলে মনে করে. ইন্দ্রিয়সুখ ভোগ ও ঐশ্বর্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তারা বলে যে, তার ঊধ্বে আর কিছুই নেই. "
ভগবদগীতাকে সমস্ত বেদ-উপনিষদের সার-নির্যাস বলা হয় (সর্বোপনিষদোগাবো). ভগবান শ্রীকৃষ্ণর উক্তি ও ভগবদগীতার তথ্যের সাথে বেদ-উপনিষদের মৌল তত্ত্বের সুস্পষ্ট সামঞ্জস্য রয়েছে. নিম্নে কিছু সাদৃশ্য লক্ষ্য করুন -
1. ভগবদগীতা - 8/9 নং শ্লোক ও 13/18 নং শ্লোক আর শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের (3/8) নং শ্লোক একই
২. গীতার 15/14 নং শ্লোক আর বৃহদারণ্যক উপনিষদ 5/9/1 নং শ্লোক একই.
3. গীতার 9/10 নং শ্লোক আর ঐতরেয় উপনিষদ 3/11 নং শ্লোক এক.
4. গীতার 15/18 নং শ্লোক আর ছান্দোগ্য উপনিষদ 8/1২/13 নং শ্লোকে একই কথা বলা হয়েছে.
5. গীতার 7/২ নং শ্লোক আর মুন্ডক উপনিষদ 1/3 নং শ্লোকে একই কথা বলা হয়েছে.
6. গীতার 10/২ নং শ্লোক আর শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ 6 / 7-8 নং শ্লোক একই.
7. গীতার ২/২0 নং শ্লোক আর কঠোপনিষদ 1/২/18 নং শ্লোক একই.
*****************************************************************************************************************************
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পূজা ছাড়া জন্মাষ্টমী অসম্পূর্ণ হবে !
যার আগমনে এই ধরণী (পৃথিবী) আনন্দে পরিপূর্ণ হয়, যার স্মরণ মাত্র হৃদয় প্রফুল্লিত হয়, যার নাম কীর্তনে হৃদয়ে প্রেম ভাব জাগে, যার শ্রী বিগ্রহ দর্শনে আমার চোখ-মন-হৃদয় তৃপ্তি পায়, যার করুনা-কৃপার কথা মনে পড়া মাত্র চোখ আপনাআপনি অশ্রুসিক্ত হয়, যার লীলাকথা শোনা মাত্র হৃদয় ব্যাকুল হয়, যার বংশীধানি শোনা মাত্র মন-অহংকার আপনা-আপনি নত হয়ে যায় ও বাহ্য জগতের কথা আর মনে রাখা সম্ভব হয় না - আপনা-আপনি তার চরণে সব সমর্পন হয়ে যায়----- আমার সেই প্রাণ -গোবিন্দের চরণে আমার শতকোটি -সহস্রকোটি প্রণাম।
জন্মাষ্টমী ব্রত ভগবান শ্রী কৃষ্ণের নাম -জপ-পূজা -বন্দনা-কীর্তন-স্মরণ-নিজের সাধ্যমতো ভোগ নিবেদন প্রত্যেকের করা উচিত।