লক্ষ্মী দেবী কে❓
লক্ষ্মী দেবী কে❓"
চিন্ময় জগতে কিভাবে লক্ষ্মীদেবী আবির্ভূত হন❓
সনাতনী শাস্ত্র অনুসারে, লক্ষ্মীদেবী হলেন পরমাত্মা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রকাশ ভগবান শ্রীবিষ্ণুর (নারায়ন) নিত্য পত্মী।এই লক্ষ্মী পরমাত্মা শ্রীকৃষ্ণের মন থেকে আবির্ভূত হয়ে ছিলেন এবং ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আজ্ঞায় নারায়নের প্রিয়তমা পত্নি রুপে বৈকুন্ঠে মহালক্ষ্মীরুপে ভগবান বিষ্ণুর প্রেমময়ী সেবায় সর্বদা যুক্ত থাকেন।পুনরায় সে মহালক্ষ্মী জড় জগতের মহা মনোরম স্বর্গলোকে (ইন্দ্রলোক)স্বর্গলক্ষ্মী, মত্যলোকের (পৃথিবী) গৃহে গৃহে গৃহলক্ষ্মী রুপে পূজিত হন।
যেখানে যেখানে নারায়ন (বিষ্ণু)থাকেন সেখানে সেখানে সর্বদা লক্ষ্মীদেবী অবস্থিত থাকেন।যেখানে নারায়ন নেই সেখানে কখনো লক্ষ্মীদেবী থাকতে পারে না।নারায়ন ভিন্ন লক্ষ্মীদেবীকে কখনো আলাদাভাবে পূজা করা উচিত নয়।তাই প্রত্যেক সনাতনীর পরম কর্তব্য প্রতিদিন গৃহে শ্রীশ্রী রাধাগোবিন্দ অথবা শ্রীশ্রী লক্ষ্মী নারায়নের যুগপৎ চিত্রপটে পুষ্প,চন্দন, তুলসী,নৈবেদ্য,ধূপ,দীপ ইত্যাদি সহকারে পূজা করা।অথবা সদাচারী ব্রাহ্মণ দ্বারা যুগপৎ লক্ষ্মী নারায়নের চিত্রপটে ঘট স্থাপন পূর্বক পূজা করা।তুলসী পত্র শ্রীবিষ্ণুর চরণ এবং নৈবেদ্য অথাৎ ভোগসামগ্রীতে নিবেদন করা যাবে। কিন্তু কখনো লক্ষ্মীদেবীর চরণে প্রদান করা যাবে না।
লক্ষ্মীদেবীর আবির্ভাবঃ ব্রহ্মবৈবর্ত পুরান শাস্ত্রের ব্রহ্মখন্ডের ২য় এবং ৩য় অধ্যায়ের ১-৬৩ নং শ্লোকের বর্ণনা অনুসারে,চিন্ময় জগতের সর্বোচ্চ লোক হল গোলক ধাম। তার নিম্নে বৈকুন্ঠলোক।
গোলক, বৈকুন্ঠ এবং শিবলোককে একত্রে চিন্ময় জগৎ বলা হয়।
চিন্ময় জগতের সর্বোচ্চ লোক গোলক বৃন্দাবনের রত্নসিংহাসনে প্রবিষ্ট আছেন পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। তিনি দ্বিভুজ, মুরলীধর এবং শ্যামসুন্দর(গায়ের রং শ্যামবর্ণ)।
তার মস্তকে উজ্জ্বল মুকুট, গলায় বনমালা,রত্ন অলংকারে শোভিত।
সেই পরম প্রভু ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দক্ষিণ অঙ্গ থেকে আবির্ভূত হন চতুর্ভুজ নারায়ন।
শ্রীকৃষ্ণের বাম অঙ্গ থেকে আবির্ভূত হন শিব।
এরপর নারায়ন নাভিপদ্ম থেকে আবির্ভূত হন ব্রহ্মার।
এরপর শ্রীকৃষ্ণের বক্ষ থেকে আবির্ভূত হন মুর্তিমান ধর্মের(ধর্মের অধিষ্ঠাত্রী দেবতা)।
এরপর শ্রীকৃষ্ণের মুখ থেকে আবির্ভূত হন সরস্বতী দেবীর।
এরপর ব্রহ্মবৈবর্ত পুরান, ব্রহ্মখন্ড ৩/৬৪-৬৮ শ্লোকের বর্ণনা অনুযায়ী, শ্রীকৃষ্ণের মন থেকে আবির্ভূত হন লক্ষ্মী দেবীর।
সৌতিরুবাচ।
আবির্ব্বভূব মনসঃ কৃষ্ণস্য পরমাত্মনঃ।
একা দেবী গৌরবর্ণা রত্নালঙ্কারভূষিতা। ৬৪
পীতবস্ত্রপরীধানা সস্মিতা নবযৌবনা।
সর্ব্বৈশ্বর্য্যাধিদেবী সা সর্ব্বসম্পৎফলপ্রদা ॥ ৬৫
স্বর্গেষু স্বর্গলক্ষ্মীশ্চ রাজলক্ষ্মীশ্চ রাজসু।
সা হরেঃ পুরতঃ স্থিত্বা পরমাত্মানমীশ্বরম্।
তুষ্টাব প্রণতা সাধ্বী ভক্তিনস্রাত্মকন্ধরা ॥ ৬৬
মহালক্ষ্মীরুবাচ।
সত্যস্বরূপং সত্যেশং সত্যবীজং সনাতনম্।
সত্যাধারঞ্চ সত্যয়ং সত্যমূল', নমাম্যহম্ ॥ ৬৭
ইত্যুত্ত্বা শ্রীহরিং নত্বা সা চোবাস সুখাসনে।
তপ্তাকাঞ্চনবর্ণাভা ভাসয়ন্তী দিশস্তিষা ॥ ৬৮
-( ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণঃ ব্রহ্মখন্ড ৩/৬৪-৬৮)
অনুবাদঃ সৌতি বললেন,এরপর পরমাত্মা শ্রীকৃষ্ণের মন থেকে রত্নালঙ্কার ভূষিতা গৌরবর্ণা এক দেবী আবির্ভূত হলেন। তিনি সম্মিতা এবং নব যৌবনা। তাঁর পরিধান পীতবস্ত্র। তাঁ হতে সমুদয় সম্পত্তি লাভ করা যায়। তিনিই সকল ঐশ্বর্য্যের অধিষ্ঠাত্রী দেবতা। তিনি স্বর্গে স্বর্গ- লক্ষ্মী ও রাজ সন্নিধানে রাজলক্ষ্মী নামে অভিহিত হন। সাধ্বী মহালক্ষ্মী ভক্তিনম্র মস্তকে পরমাত্মা পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণের সম্মুখীন হয়ে স্তব করতে লাগলেন। মহালক্ষ্মী বললেন, যিনি সত্যস্বরূপ, সত্যের ঈশ্বর, সত্যের কারণ এবং সত্যের আধার-সেই সত্যজ্ঞ সনাতন আপনাকে নমস্কার। সেই মহালক্ষ্মী তপ্ত- কাঞ্চনসদৃশ দেহকান্তিতে দশদিক্ উদ্ভাসিত করে, শ্রীকৃষ্ণকে এই প্রকার স্তব ও প্রণাম পূর্ব্বক সুখাসনে উপবেশন করলেন।