বসুদেব ও দেবকীর 8 টি সন্তান হল কীর্তিমান, ভদ্রসেন, সুষেন, উদারভি, ঋজু, সংবর্ধ, বলরাম, শ্রীকৃষ্ণ। তারমধ্যে কীর্তিমান, ভদ্রসেন, সুষেন, উদারভি, ঋজু, সংবর্ধ---এই ছয় জনকে কংস জন্ম হওয়া মাত্রই হত্যা করেছিল । বসুদেব ও দেবকীর 7ম সন্তান বলরামকে সাক্ষাৎ ভগবানের আদেশ এ যোগমায়া নন্দের গৃহে অবস্থানকারী বসুদেবের দ্বিতীয় স্ত্রী রোহিনীর গর্ভে স্থাপন করে দেন । পরবর্তীকালে বসুদেবের দ্বিতীয় পত্নী রোহিণীর গর্ভ থেকে বলরাম জন্মগ্রহণ করেন । পরবর্তীকালে বসুদেব ও দেবকীর 8ম সন্তান রূপে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং কংসের কারাগারে আবির্ভূত হন ।
শ্রীকৃষ্ণের বাঁশি কে? ভগবানের হাতে যে বাঁশি ছিল সেটা কোন সামান্য বাঁশি নয়, এটা স্বয়ং মা সরস্বতী। মা সরস্বতী কৃষ্ণের অধরামৃত পান করবো বলে 10 হাজার বছর ধরে মা সরস্বতী কৃষ্ণ কৃষ্ণ বলে কেঁদে ছিলেন এবং কঠোর তপস্যা করেছিলেন। মা সরস্বতীর তপস্থায় খুশি হয়ে কৃষ্ণ খুশি হয়ে দেখা দিয়ে বললেন---------, সরস্বতী! বল তুমি কি চাও ? আমি তোমাকে তাই দিব। সরস্বতী হাতজোড় করে বলছিল! হে কৃষ্ণচন্দ্র তোমার অধরে কত সুধা রয়েছে, সেটা আমার জানা হলো না। কিন্তু আমি বিদ্যার ভাণ্ডার, বুদ্ধির ভান্ডার, তুমি যে কৃষ্ণ প্রেমো ধন। তোমার প্রেমের ভান্ডারে কত সুধামৃত আছে সেটা আমি পেলাম না। তাই আমি শুধু তোমার অধর সুধা পান করতে চাই। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সরস্বতীকে বলেছিলেন---- আমার অধরামৃতের অধিকার একমাত্র রাধারানীর। তাও আমি তোমাকে কথা দিলাম, 10 হাজার বছর ধরে যখন কেঁদে কেঁদে কঠোর তপস্যা করে আমাকে ডাকলে—-আমি তোমাকে অধরামৃত পান করাবো। যখন বৃহস্পতির যজ্ঞ থেকে তুমি বাঁশ রূপ ধারণ করে অংশ অবতার রূপে তুমি অবতীর্ণ হবে। আর সেই বাঁশ 25 পর্ব হবে। সেই 25 পর্ব থেকে 9 পর্ব দিয়ে বিষ্ণুর ধনুক হবে। 7 পর্ব দিয়ে শিবের ধনুক। 5 পর্ব দিয়ে রামের ধনুক। 3 পর্ব দিয়ে অর্জুনের ধনুক। আর 1পর্ব বাকি থাকবে তাকে আমি তিনটি টুকরো করব এবং তিনটি বাঁশি (1.বেনু, 2.বংশী, 3.মুরলী) বানাবো আর সরস্বতী তুমি বাঁশি রূপ ধারণ করে আমার হাতে থাকবে। আমি তোমাকে হাতে ধরে আমার ঠোঁটে ঠেকিয়ে তোমাকে অধরামৃত পান করাবো।।লোকে জানবে বাঁশি কিন্তু আমি জানব তুমি স্বয়ং সরস্বতী। বাঁশি কত প্রকার ও কি কি ?-------- বাঁশি 3 প্রকার— 1.বেনু, 2.বংশী, 3.মুরলী।
শ্রীনন্দ রাখিল নাম নন্দের নন্দন। ১
যশোদা রাখিল নাম যাদু বাছাধন ॥ ২
উপানন্দ নাম রাখে সুন্দর-গোপাল । ৩
ব্রজবালক নাম রাখে ঠাকুর-রাখাল ॥ ৪
সুবল রাখিল নাম ঠাকুর কানাই । ৫
শ্রীদাম রাখিল নাম রাখাল রাজা ভাই ॥ ৬
ননীচোরা নাম রাখে যতেক গোপিনী । ৭
কালসোণা নাম রাখে রাধাবিনোদিনী ॥ ৮
কুব্জা রাখিল নাম পতিত-পাবন হরি । ৯
চন্দ্রাবলী নাম রাখে মোহন-বংশীধারী ॥ ১০
অনন্ত রাখিল নাম অন্ত না পাইয়া । ১১
কৃষ্ণ নাম রাখে গর্গ ধ্যানেতে জানিয়া ॥ ১২
কম্বমুনি নাম রাখে দেবচক্রপাণি। ১৩
বনমালী নাম রাখে বনের হরিণী ॥ ১৪
গজহস্তী নাম রাখে শ্রীমধুসূদন । ১৫
অজামিল নাম রাখে দেব নারায়ণ ॥ ১৬
পুরন্দর নাম রাখে দেব শ্রীগোবিন্দ । ১৭
দ্রৌপদী রাখিল নাম দেব দীনবন্ধু ॥ ১৮
সুদাম রাখিল নাম দারিদ্র্য-ভঞ্জন । ১৯
ব্রজবাসী নাম রাখে ব্রজের জীবন ॥ ২০
দর্পহারী নাম রাখে অর্জুন সুধীর। ২১
পশুপতি নাম রাখে গরুড় মহারীর ॥ ২২
যুধিষ্ঠির নাম রাখে দেব যদুবর। ২৩
বিদুর রাখিল নাম কাঙ্গালের ঠাকুর ॥ ২৪
বাসুকী রাখিল নাম দেব-সৃষ্টি স্থিতি। ২৫
ধ্রুবলোকে নাম রাখে ধ্রুবের সারথি ॥ ২৬
নারদ রাখিল নাম ভক্ত-প্রাণধন। ২৭
ভীষ্মদেব নাম রাখে লক্ষ্মী-নারায়ণ ॥ ২৮
সত্যভামা নাম রাখে সত্যের সারথি। ২৯
জাম্ববতী নাম রাখে দেব যোদ্ধাপতি ॥ ৩০
বিশ্বামিত্র নাম রাখে সংসারের সার। ৩১
অহল্যা রাখিল নাম পাষাণ-উদ্ধার ॥ ৩২
ভৃগুমুনি নাম রাখে জগতের হরি । ৩৩
পঞ্চমুখে রামনাম গান ত্রিপুরারি ॥ ৩৪
কুঞ্জকেশী নাম রাখে বলি সদাচারী । ৩৫
প্রহ্লাদ রাখিল নাম নৃসিংহ মুরারি ॥ ৩৬
বশিষ্ঠ রাখিল নাম মুনি-মনোহর। ৩৭
বিশ্বাবসু নাম রাখে নবজলধর ॥ ৩৮
সম্বর্ত্তক রাখে নাম গোবর্দ্ধনধারী । ৩৯
প্রাণপতি নাম রাখে যত ব্রজনারী ॥ ৪০
অদিতি রাখিল নাম আরতি-সুদন । ৪১
গদাধর নাম রাখে যমল-অর্জ্জুন ।। ৪২
মহাযোদ্ধা নাম রাখে ভীম মহাবল। ৪৩
দয়ানিধি রাখে নাম দরিদ্র সকল । ৪৪
বৃন্দাবন-চন্দ্র নাম রাখে বৃন্দাদুতী । ৪৫
বিরজা রাখিল নাম যমুনার পতি। ৪৬
বাণীপতি নাম রাখে গুরু বৃহস্পতি । ৪৭
লক্ষ্মীপতি নাম রাখে নাম সুমন্ত্র সারথি ।। ৪৮
সন্দীপনি নাম রাখে দেব অন্তর্যামী। ৪৯
পরাশর নাম রাখে ত্রিলোকের স্বামী।। ৫০
পদ্মযোনি নাম রাখে অনাদির আদি । ৫১
নট নারায়ণ নাম রাখিল সম্বাদী ।।৫২
হরেকৃষ্ণ নাম রাখে প্রিয় বলরাম। ৫০
ললিতা রাখিল নাম দু্র্ব্বাদলশ্যাম ।। ৫৪
বিশাখা রাখিল নাম অনঙ্গমোহন। ৫৫
সুচিত্রা রাখিল নাম শ্রীবংশীবদন। ৫৬
আযান রাখিল নাম ক্রোধ-নিবারণ। ৫৭
চণ্ডকশী নাম রাখে কৃত্তান্ত শাসন ॥ ৫৮
জ্যোতিষ্ক রাখিল নাম নীলকান্তমণি। ৫৯
গোপীকান্ত নাম রাখে সুদাম-ঘরণী। ৬০
ভক্তগণ নাম রাখে দেব জগন্নাথ। ৬১
দূর্ব্বাসা রাখেন নাম অনাথের নাথ। ৬২
রাসেশ্বর নাম রাখে যতেক মালিনী। ৬৩
সর্ব্ব-যজ্ঞেশ্বর নাম রাখেন শিবানী। ৬৪
উদ্ধব রাখিল নাম মিত্রহিত কারী । ৬৫
অক্রুর রাখিল নাম ভব ভয় সাথী।। ৬৬
গুঞ্জমালী নাম রাখে নীল পীতবাস । ৬৭
সর্ব্ববেত্তা রাখে নাম দ্বৈপায়ন ব্যাস।। ৬৮
অষ্টসখী নাম রাখে ব্রজের ঈশ্বর। ৬১
সুরলোকে রাখে নাম অখিলের সার। ৭০
বৃষভানু নাম রাখে পরম ঈশ্বর। ৭১
স্বর্গবাসী রাখে নাম দেব পরাৎপর। ৭২
পুলোমা রাখেন নাম অনাথের সখা। ৭৩
রসসিন্ধু নাম রাখে সখী চিত্রলেখা। ৭৪
চিত্ররথ নাম রাখে আরতি দমন। ৭৫
পুলস্ত্য রাখিল নাম নয়ন-রঞ্জন ॥ ৭৬
কশ্যপ রাখেন নাম রাস রাসেশ্বর। ৭৭
ভাণ্ডারীক নাম রাখে পূর্ণ-শশধর ॥ ৭৮
সুমালী রাখিল নাম পুরুষ-প্রধান । ৭৯
পুরঞ্জন নাম রাখে ভক্তগণ প্ৰাণ ॥ ৮০
রজকিনী নাম রাখে নন্দের-দুলাল। ৮১
আহ্লাদিনী নাম রাখে ব্রজ়ের-গোপাল ॥ ৮২
দৈবকী রাখিল নাম নয়নের মণি। ৮৩
জ্যোতির্ময় নাম রাখে যাজ্ঞবল্ক্য মুনি ॥ ৮৪
অত্রিমুনি নাম রাখে কোটি চন্দ্রেশ্বর । ৮৫
গৌতম রাখিল নাম দেব বিশ্বম্ভর ।।৮৬
মরীচি রাখিল নাম অচিন্ত্য অচ্যুত। ৮৭
জ্ঞানাতীত নাম রাখে সৌনকাদি সুত ॥ ৮৮
রুদ্রগণ নাম রাখে দেব মহাকাল। ৮৯
বসুগণ রাখে নাম ঠাকুর দয়াল ॥ ৯০
সিদ্ধগণ নাম রাখে পুতনা-নাশন । ৯১
সিদ্ধার্থ রাখিল নাম কপিল তপোধন ॥ ৯২
ভাগুরি রাখিল নাম অগতির গতি। ৯৩
মৎস্যগন্ধা নাম রাখে ত্রিলোকের পতি ॥ ৯৪
শুক্রাচার্য্য রাখে নাম অখিল বান্ধব । ৯৫
বিষ্ণুলোকে নাম রাখে দেব শ্রীমাধব ॥ ৯৬
যদুগণ নাম রাখে যদুকুলপতি । ৯৭
অশ্বিনীকুমার নাম রাখে সৃষ্টি-স্থিতি ॥ ৯৮
অর্য্যমা রাখিল নাম কাল-নিবারণ । ৯৯
সত্যবতী নাম রাখে অজ্ঞান-নাশন ॥ ১০০
পদ্মাক্ষ রাখিল নাম ভ্রমর-ভ্রমরী । ১০১
ত্রিভঙ্গ রাখিল নাম যত সহচরী ॥ ১০২
বঙ্কচন্দ্র নাম রাখে শ্রীরূপমঞ্জরী । ১০৩
মাধুরী রাখিল নাম গোপী-মনোহারী ॥ ১০৪
মঞ্জুমালী নাম রাখে অভীষ্ট-পূরণ । ১০৫
কুটিলা রাখিলা নাম মদন-মোহন ॥ ১০৬
মঞ্জুরী রাখিল রাম কৰ্ম্মবন্ধ-নাশ । ১০৭
ব্রজবন্ধু নাম রাখে পূর্ণ-অভিলাষ ॥ ১০৮
ব্রহ্মোবাচ – রক্ষ রক্ষ হরে মাঞ্চ নিমগ্নং কামসাগরে। দুষ্কীর্ত্তিজলপূর্ণে চ দুষ্পারে বহুসঙ্কটে ৷৷ ১ ৷৷ ভক্তিবিস্মৃতিবীজে চ বিপৎসোপানদুস্তরে। অতীব নিৰ্ম্মলজ্ঞানচক্ষুঃ প্রচ্ছন্নকারিণে ৷৷ ২৷
জন্মোসি অসহিতে যোািক্রৌঘসস্কুলে। রতিস্রোতঃসমাযুক্তে গম্ভীরে ঘোর এব চ ৷৷ ৩৷৷ প্রথমামৃতরূপে চ পরিণামবিষালয়ে। যমালয়প্রবেশায় মুক্তিদ্বারাতিবিস্মৃতৌ ॥ ৪॥
বুদ্ধ্যা তরণ্যা বিজ্ঞানৈরুদ্ধরাম্মানতঃ স্বয়ম্। স্বপ্নঞ্চ | ত্বং কর্ণধারঃ প্রসীদ মধুসূদন ৷৷ ৫৷ মবিধাঃ কতিচিন্নাথ নিযোজ্যা ভৰকৰ্ম্মণি। সস্তি বিশ্বেশ বিধয়ো হে বিশ্বেশ্বর মাধব ৷ ৬৷৷
ন কৰ্ম্মক্ষেত্রমেবেদং ব্রহ্মলোকেঽয়মীলিতঃ। তথাপি নঃ স্পৃহা কামে ভুঙক্তিব্যবধায়কে। ৭৷৷ হে নাথ করুণাসিন্ধো কৃপাং কুরু। ত্বং মহেশ মহাজ্ঞতা দুঃস্বপ্নং মাং ন দৰ্শয় ৷৷ ৮৷৷
ইত্যুক্ত্বা জগতাং ধাতা বিরাম সনাতনঃ। ধ্যায়ং ধ্যায়ং মৎপদাজং শশ্বৎ সম্মার মামিতি। ৯৷৷ ব্ৰহ্মণা চ কৃতং স্তোত্রং ভক্তিযুক্তশ্চ যঃ পঠেৎ। স চৈবাকৰ্ম্মবিষয়ে ন নিমণো ভবেদ ধ্রুবম্ ৷৷ ১০৷৷
মম মায়াং বিনির্জিত স জ্ঞানং লভতে ধ্রুব। ইহলোকে ভক্তিযুক্তো মদ্ভক্তপ্রবরো ভবেৎ৷৷ ১১ ৷৷
ইতি শ্রীব্রহ্মদেব-কৃতং শ্রীকৃষ্ণস্তোত্রং সম্পূর্ণম্।
*************************************************************
শ্রীকৃষ্ণ
বেদ শব্দের অর্থ জ্ঞান এবং সেটি ভগবান থেকে প্রকাশিত হচ্ছে. বেদ শাশ্বত ও অপৌরুষেয় পরম জ্ঞান নিত্য ও কোন মানুষের রচিত নয়. শাস্ত্রীয় ইতিহাস অনুসারে, সৃষ্টির আদিতে ব্রক্ষ্মান্ডের প্রথম জীব স্বয়ম্ভু ব্রক্ষ্মা এই বেদ-জ্ঞান লাভ করেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণর নিকট থেকে, তার বেণুধ্বনির মাধ্যমে।
যো ব্রক্ষ্মাণং বিদধাতি পূর্ব্বং যো বৈ বেদাংশ্চ গাপয়তি স্ম কৃষ্ণঃ.
(- 1/২4 গোপালতাপনী উপনিষদ)
"যিনি সৃষ্টির আদিতে ব্রক্ষ্মাকে বৈদিক জ্ঞান উপদেশ করেছিলেন এবং পূর্বে বৈদিক জ্ঞান বিস্তার করেন, তিনি শ্রীকৃষ্ণই."
ব্রক্ষ্মসংহিতায় শ্রীকৃষ্ণকে বেদের সারসত্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে (তুষ্টাব বেদসারেণ স্তোত্রেণানেন কেশবম - 5/২8). বেদ অনুসারে, ব্রক্ষ্মা ভগবান শ্রীবিষ্ণু হতে উদ্ভূত, আর শ্রীকৃষ্ণ শ্রীবিষ্ণুরও উৎস. জড় জগতে ভগবানের
তিনটি পুরুষাবতার - বিষ্ণুরূপ প্রকাশিতঃ
(1) প্রথম পুরুষাবতারঃ কারণোদকশায়ী বিষ্ণু বা মহাবিষ্ণু - কারণ-উদক সাগরে (কার্যকারণ মহাসাগর) শায়িত এই মহাবিষ্ণুর বিরাট শরীর থেকে কোটি কোটি ব্রক্ষ্মান্ড (universes এর ক্লাস্টার) প্রকাশিত হয়, মহাপ্রলয়ে (অবলুপ্তি) সমস্ত জড় ব্রক্ষ্মান্ডগুলি ধ্বংস হয়ে সূক্ষ্ম জড় উপাদনরূপে (মহত্তত্ব) তাঁর দিব্য শরীরে বিলীন হয়.
(২) দ্বিতীয় পুরুষাবতারঃ গর্ভোদকশায়ী বিষ্ণু - মহাবিষ্ণু নিজেকে কোটি কোটি রূপে বিস্তার করে প্রতিটি ব্রক্ষ্মান্ডে প্রবেশ করে ব্রক্ষ্মান্ডের গর্ভোদকে শয়ন করেন. তারপর ব্রক্ষ্মাকে সৃষ্টি করেন. ব্রক্ষ্মার মাধ্যমে সূর্য ও চতুর্দশ ভুবন বা গ্রহলোকসমূহ (গ্রহ সিস্টেম) সৃষ্টি করেন.
(3) তৃতীয় পুরুষাবতারঃ - ক্ষীরোদকশায়ী বিষ্ণু - প্রতি ব্রক্ষ্মান্ডে শ্রীবিষ্ণু নিজেকে অসংখ্য রূপে বিস্তার করে করে জীবসত্তাকে ভগবদধামে ফিরে আসতে সাহায্য করার জন্য প্রত্যেক জীব হৃদয়ে পরমাত্মারূপে অবস্থান করেন.
এইভাবে, কোটি কোটি, অসংখ্য অনন্তরূপে ভগবান নিজেকে বিস্তার করেন, কিন্তু তিনি 'অদ্বৈতম' (অ দ্বৈত) তিনি এক ও অভিন্ন এবং সকল রূপের পরম উৎস শ্রীকৃষ্ণ স্বরূপ, এটিই বৈদিক শাস্ত্রের সিধান্ত. ব্রক্ষ্মসংহিতায় বলা হয়েছে (5/33) -
অদ্বৈতম-অচ্যুতম-অনাদিম-অনন্তরূপম আদ্যং পুরাণপুরুষং নবযৌবনঞ্চ.
বেদেষু দুর্লভম-অদুর্লভম-আত্মভক্তৌ গোবিন্দম-আদি পুরুষং তমহং ভজামি ..
"যিনি অদ্বৈত, অচ্যুত, অনাদি, অনন্তরূপসম্পন্ন, আদি পুরাণপুরুষ হয়েও নিত্যনবনবায়মান যৌবনসম্পন্ন সুন্দর পুরুষ, বেদাদি শাস্ত্র পাঠে দুর্লভ কিন্তু শুদ্ধ আত্মভক্তির লভ্য, সেই আদিপুরুষ গোবিন্দকে আমি ভজনা করি."
বেদে সর্বদেবতার উপাস্য ভগবান রূপে শ্রীবিষ্ণুকে স্তুতি করা হয়েছে, যেমন ঋগবেদে (1/২২/২0) বলা হয়েছে -
ওঁ তদবিষ্ণোঃ পরমং পদং সদা পশ্যন্তি সূরয়ো দিবীব চক্ষুরাততম.
তদবিপ্রাসো বিপন্যবো জাগৃবাংষঃ সমিন্ধতে বিষ্ণোর্যৎ পরমং পদম ..
"পরমেশ্বর বিষ্ণুই হচ্ছেন পরম সত্য. সুরগন তাঁর পাদপদ্ম দর্শনে সর্বদাই উদগ্রীব. সূর্যের মতোই ভগবান তাঁর শক্তিরশ্মির বিস্তার করে সর্বত্র ব্যাপ্ত আছেন. " ঋগবেদে 1/২২/17, 1/২২/18, 1/154/1, 1/15২/২, 1/154/3, 1/154/4, 1/154/6 নং মন্ত্রে বিষ্ণুর কথা বলা হয়েছে.
অথর্ববেদে বলা হয়েছে, যো ব্রক্ষ্মাণং বিদধাতি পূর্বং যো বৈ বেদাংশ্চ গাপয়তি স্ম কৃষ্ণঃ. অর্থাৎ - "ব্রক্ষ্মা, যিনি পূর্বকালে জগতে বৈদিক জ্ঞান প্রদান করেন, সেই জ্ঞান তিনি সৃষ্টির আদিতে যাঁর কাছ থেকে প্রাপ্ত হন তিনি হচ্ছেন শ্রীকৃষ্ণ."
শ্রীবিষ্ণু শ্রীকৃষ্ণেরই প্রকাশ বা বিস্তার, শাস্ত্রের সিধান্ত, যেমন সকল বেদ উপনিষদের সার গীতোপনিষদ, ভগবদগীতায় শ্রীকৃষ্ণকে বিষ্ণু বলে সম্বোধন করা হয়েছে - শমং চ বিষ্ণো (11/২4), প্রতপন্তি বিষ্ণো - (11/30), আদিত্যানাম অহং বিষ্ণু (10/২1) ইত্যাদি. শ্রীকৃষ্ণই শ্রীবিষ্ণুরূপে সর্বজীবের অন্তরস্থিত পরমাত্মা - অহমাত্মা গূঢ়াকেশ সর্বভূতাশয়স্থিতঃ (10/২0). বিষ্ণুমূর্তি-সমূহ, রাম-নৃসিংহ ইত্যাদি অবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণরই প্রকাশ, অংশ, কলা. শ্রীকৃষ্ণই স্বয়ং ভগবান (এতে চাংশ কলাঃ পুংসঃ কৃষ্ণস্ত ভগবান স্বয়ম - ভাগবতম 1/3/২8). ভগবান শ্রীকৃষ্ণ পূর্ণপরাৎপর পুরুষ, সেজন্য তাঁর থেকে অসংখ্য ভগবৎ-রূপ বিস্তার হলেও তিনি তাঁর পূর্ণস্বরূপে নিত্যবিরাজমান. শ্রীঈশোপনিষদে যেমন বলা হয়েছে (1 আবাহন)
ওঁ পূর্ণমদঃ পূর্ণমিদং পূর্ণাৎ পূর্ণাৎ পূর্ণমুদচ্যতে.পূর্ণস্য পূর্ণমাদায় পূর্ণমেবাবশিষ্যতে ..
"পরমেশ্বর ভগবান সর্বতোভাবে পূর্ণ. তিনি সম্পূর্ণভাবে পূর্ণ বলে এই দৃশ্যমান জগতের মতো তাঁর থেকে উদ্ভূত সব কিছুই সর্বতোভাবে পূর্ণ. যা কিছু পরম পূর্ণ থেকে উদ্ভূত হয়েছে তা সবই পূর্ণ. কিন্তু যেহেতু তিনি হচ্ছেন পরম পূর্ণ, তাই তাঁর থেকে অসংখ্য অখন্ড ও পূর্ণ সত্তা বিনির্গত হলেও তিনি পূর্ণরূপেই অবশিষ্ট থাকেন. "
ভগবদগীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণর কয়েকটি উক্তি
বেদ্যং পবিত্রং ওঙ্কার - 9/17 - আমাকে পবিত্র ওঙ্কার বলে জানবে.
প্রণবঃ সর্ববেদেষু - 7/8 - সমস্ত বেদে উল্লেখিত প্রণব (ভগবানের নির্বিশেষ নাম) আমিই.
বেদে চ প্রথিতঃ পুরুষোত্তম - 15/18 - বেদে আমি পুরুষোত্তম নামে খ্যাত
বেদানং সামবেদোহস্মি - 10/২২ - সমস্ত বেদের মধ্যে আমি সামবেদ
ঋক সাম যজুরেব চ - 9/17 - ঋক, সাম, যজুর্বেদাদিও আমি
বৃহৎসাম তথা সাম্নাং গায়েত্রী ছন্দসামহম - 10/35 - আমি সামবেদের মধ্যে বৃহৎসাম, সমস্ত ছন্দের মধ্যে গায়েত্রী.
অহং হি সর্বযজ্ঞানাং ভোক্তা চ প্রভুরেব চ - 9/২4 - আমি সমস্ত যজ্ঞের ভোক্তা, প্রভু.
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আরও বিপ্লবাত্মক কথা বলেছেন - তিনি বলেন (গীতা ২/4২)
"বিবেকবর্জিত লোকেরাই বেদের পুষ্পিত বাক্যে আসক্ত হয়ে স্বর্গসুখ ভোগ, উচ্চকুলে জন্ম, ক্ষমতা লাভ-আদি সকাম কর্মকেই জীবনের চরম উদ্দেশ্য বলে মনে করে. ইন্দ্রিয়সুখ ভোগ ও ঐশ্বর্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তারা বলে যে, তার ঊধ্বে আর কিছুই নেই. "
ভগবদগীতাকে সমস্ত বেদ-উপনিষদের সার-নির্যাস বলা হয় (সর্বোপনিষদোগাবো). ভগবান শ্রীকৃষ্ণর উক্তি ও ভগবদগীতার তথ্যের সাথে বেদ-উপনিষদের মৌল তত্ত্বের সুস্পষ্ট সামঞ্জস্য রয়েছে. নিম্নে কিছু সাদৃশ্য লক্ষ্য করুন -
1. ভগবদগীতা - 8/9 নং শ্লোক ও 13/18 নং শ্লোক আর শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের (3/8) নং শ্লোক একই
২. গীতার 15/14 নং শ্লোক আর বৃহদারণ্যক উপনিষদ 5/9/1 নং শ্লোক একই.
3. গীতার 9/10 নং শ্লোক আর ঐতরেয় উপনিষদ 3/11 নং শ্লোক এক.
4. গীতার 15/18 নং শ্লোক আর ছান্দোগ্য উপনিষদ 8/1২/13 নং শ্লোকে একই কথা বলা হয়েছে.
5. গীতার 7/২ নং শ্লোক আর মুন্ডক উপনিষদ 1/3 নং শ্লোকে একই কথা বলা হয়েছে.
6. গীতার 10/২ নং শ্লোক আর শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ 6 / 7-8 নং শ্লোক একই.
7. গীতার ২/২0 নং শ্লোক আর কঠোপনিষদ 1/২/18 নং শ্লোক একই.
*****************************************************************************************************************************