অবধূত-শব্দবাচ্য
কুলার্ণবতন্ত্রের পঞ্চম খণ্ডে প্রদত্ত শ্লোকটি হলো–
সর্বেভ্যশ্চোত্তমা বেদা বেদেভ্যো বৈষ্ণবং মহৎ।
বৈষ্ণবাদুত্তমং শৈবং শৈবাদ্দক্ষিণমুত্তমম্ ।।
দক্ষিণাদুত্তমং বামং বামাৎ সিদ্ধান্তমুত্তমম্ ।
সিদ্ধান্তাদুত্তমং কৌলং কৌলাৎ পরতরং ন হি।।- (কুলার্ণবতন্ত্র)
অর্থাৎ - সর্বাপেক্ষা বেদাচার উত্তম, বেদাচার অপেক্ষা বৈষ্ণবাচার উত্তম, বৈষ্ণবাচার অপেক্ষা শৈবাচার উত্তম, শৈবাচার অপেক্ষা দক্ষিণাচার উত্তম, দক্ষিণাচার অপেক্ষা বামাচার উত্তম, বামাচার অপেক্ষা সিদ্ধান্তাচার উত্তম, সিদ্ধান্তাচার অপেক্ষা কৌলাচার উত্তম, কৌলাচারের পর আর কিছুই নাই।
কৌলাচারের কোন নিয়ম নাই। স্থানাস্থান, কালাকাল ও কর্মাকর্মের কিছুমাত্র বিচার নাই। নিত্যাতন্ত্রের তৃতীয় পটলে কৌলাচার সম্বন্ধে বলা হয়েছে–
দিক্কালনিয়মোনাস্তি তিথ্যাদিনিয়মোন চ।
নিয়মোনাস্তি দেবেশি মহামন্ত্রস্য সাধনে।।
ক্বচিৎ শিষ্টঃ ক্বচিৎ ভ্রষ্ট ক্বচিৎ ভূতপিশাচবৎ।
নানাবেশধরাঃ কৌলাঃ বিচরন্তি মহীতলে।
কর্দমে চন্দনেহভিন্নং পুত্রে শত্রৌ তথা প্রিয়ে।
শ্মশানে ভবনে দেবি তথৈব কাঞ্চনে তৃণে।
ন ভেদো যস্য দেবেশি স কৌলঃ পরিকীর্তিতঃ।।- (নিত্যাতন্ত্র)
অর্থাৎ : মহামন্ত্র-সাধনে দিক ও কালের নিয়ম নাই; তিথি ও নক্ষত্রাদিরও নিয়ম নাই। কোন স্থানে শিষ্ট, কোথাও ভ্রষ্ট, কোথাও বা ভূত-পিশাচ-তুল্য এই প্রকার নানা বেশধারী কৌল সমুদায় পৃথিবীতে বিচরণ করেন। প্রিয়ে! কর্দম ও চন্দনে এবং পুত্র ও শত্রুতে যাহার ভেদ-জ্ঞান নাই, আর দেবী! শ্মশান ও গৃহে এবং কাঞ্চন ও তৃণে যাহার প্রভেদবোধ নাই, সেই ব্যক্তি কৌল বলিয়া বর্ণিত হইয়াছে।
মোটকথা, কৌলাচারী ব্যক্তি প্রকৃত জিতেন্দ্রিয়, নিস্পৃহ, উদাসীন ও পরম যোগীপুরুষ এবং অবধূত-শব্দবাচ্য।