দিব্যভাবের সাত্ত্বিক পঞ্চ ম-কার
১] মদ্য
নির্বিকার নিরঞ্জন পরব্রহ্ম, তাতে যে তাতে যে আনন্দ জ্ঞান সমাধি, তাহা মদ্য।
("যদুক্তং পরমং ব্রহ্ম নির্বিকারং নিরঞ্জনং।
তস্মিন প্রমদন জ্ঞানং তৎ মদ্য পরিকীর্তিতম্।।"
বিজয় তন্ত্র)।
ব্রহ্মরন্ধ্র হতে যে সোমধারা ক্ষরিত হয়, তাহা পান করে যে সাধক আনন্দময় হন, তিনি মদ্যসাধক।
("সোমধারা ক্ষরেদ্ যা তু ব্রহ্মরন্ধ্রাদ্ বরাননে।
পীত্বা আনন্দময় স্ত্বাং যঃ স এব মদ্য সাধক।।”
আগমসার)।...
২] মাংস
আমাতে সদসৎকর্ম সমর্পণ—মাংস। যোগীগণের পশুশরীর উৎপন্ন ‘মাংস’ নয়।
("এবং মাং সনোতি হি যৎকর্ম তৎ মাংস পরিকীর্তিতম।
ন চ কায় প্রতীকন্তু যোগিভির্মাংসম্ উচ্যতে।।"
কৈলাস তন্ত্র)।
কাম ক্রোধাদি সমস্ত পশু জ্ঞান অসির দ্বারা ছেদন করে জিনি অবিষয় মাংস ভোজন করেন, তিনি মাংস সাধক। ‘মা’ শব্দে রসনা, রসনার প্রিয় বাক্য—যারা সেই বাক্য ভোজন করেন অর্থাৎ নিরন্তর মৌন থাকেন, তাঁরা মাংস সাধক।
("মা শব্দাদ্ রসনা জ্ঞেয়া তদ্ অংশান রসনাপ্রিয়ে।
সদা যো ভক্ষয়েৎ দেবী স এব মাংস সাধকঃ।।"
কুলার্ণব)।
৩] মৎস্য
সকল ভূতে আপনার [নিজের] মত যে সুখ-দুঃখ-বোধ-রূপ সাত্ত্বিক জ্ঞান, তাহাই মৎস্য বলে কথিত হয়।
("মৎস্যমানং সর্ব্বভূতে সুখদুঃখম্ ইদম্ প্রিয়ে।
ইতি যৎ সাত্ত্বিকং জ্ঞানং তৎ মৎস্য পরিকীর্তিতঃ।।"
বিজয় তন্ত্র)।
গঙ্গা যমুনার [ইড়া পিঙ্গলার] মধ্যে দুটি মৎস্য [প্রাণ অপান] সর্বদা বিচরণ করছে। সেই দুটীকে যিনি ভোজন করেন অর্থাৎ যার প্রান অপানের ক্রিয়া নিরুদ্ধ হয়েছে, তিনি মৎস্য সাধক।
("গঙ্গা যমুন্যোর্মধ্যে মৎস্যৌ দ্বৈ চরতঃ সদা।
তৌ মৎস্যৌ ভক্ষয়েদ যস্তু স ভবেৎ মৎস্য সাধকঃ।।”
কুলার্ণব)।
৪] মুদ্রা
সৎসঙ্গে মুক্তি হয়, অসৎসঙ্গে বন্ধন। অসৎসঙ্গ মুদ্রণ [পরিত্যাগ] মুদ্রা।
("সৎসঙ্গেন ভবেৎ মুক্তি, অসৎ সঙ্গেষু বন্ধনম্।
অসৎসঙ্গম্ উদ্রণৎ যৎ তৎ মুদ্রা পরিকীর্তিতা।।"
আগমসার)।
যার সহস্রার মহাপদ্ম কর্ণিকায় কেবল পারদের সদৃশ কোটি সূর্যের ন্যায় প্রভাব সম্পন্ন কোটি চন্দ্রের ন্যায় সুশীতল অতীব কমনীয় মহাকুণ্ডলিনীযুক্ত আত্মা—জ্ঞানোদয় হলে বিচরণ করেন, তিনি মুদ্রা সাধক।
("সহস্রারে মহাপদ্মে কর্ণিকামুদ্রিতাচরেৎ।
আত্মা তত্রৈব দেবেশি কেবলঃ পারদোপমঃ।।
সূর্য্যকোটী প্রতীকাশ শ্চন্দ্রকোটী সুশীতলঃ।
অতীব কমনীয়শ্চ মহাকুণ্ডলিনীযুতঃ।
যস্য জ্ঞানোদয়স্তত্র মুদ্রাসাধক উচ্যতে।।
আগমসার)।...
৫] মৈথুন
সহস্রার পদ্মকর্ণিকার অন্তর্গত বিন্দু, অর্থাৎ শিবের সহিত নাদরূপা কুণ্ডলিনীশক্তির যে মিলন, যোগীগণ তাকে মৈথুন বলেন।(যোগিনী তন্ত্র) পরাশক্তির সহিত আত্মার সংযোগ – মৈথুন।(কুলার্ণব)
("মৈথুনং পরমং তত্ত্বং সৃষ্টি স্থিতি অন্ত কারণম্।
মৈথুনাৎ জায়তে সিদ্ধির্ব্রহ্মজ্ঞানম্ সুদুর্লভং।।
কুলকুণ্ডলীনিশক্তির্দেহিনাং দেহধারিণী।
তয়া শিবস্য সংযোগো মৈথুনং পরিকীর্তিতম্।।)